শহীদ আসাদের গ্রামের মানুষ জানে না তার ইতিহাস

আজ ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আসাদ। আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেখানে তার নিকটাত্মীয়দের কেউ থাকেন না। ফলে তার কবরটি চরম অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে আছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে মহান আসাদের বীরত্বগাথা।

নিজ বাড়ির বকুলতলায় কবর শহীদ আসাদের। অযত্নে-অবহেলায় তার সমাধিতে শ্যাওলা জমেছে। কেবলমাত্র আসাদ দিবসের আগে তার সমাধিটি পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু সারাবছর এটির কোনো খোঁজখবর থাকে না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবপুরে আসাদের নামে দুটি স্কুল-কলেজ থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে নামটি পরিচিত। তবে তার মৃত্যুর ইতিহাস ও আসাদ দিবসের ব্যাপারটি বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অজানা। বরাবরের মতো এবারও আসাদ দিবস স্মরণে শিবপুরে কোনো আয়োজন নেই।

ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের এ নায়কের নামে শিবপুর কলেজের নামকরণ করা হয় শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ। সেই কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছেও শহীদ আসাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে হতাশ হতে হয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ আসাদের ভূমিকা সঠিকভাবে জানে না।

কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অনিক দাস বলেন, কলেজের কোথাও শহীদ আসাদ কিংবা ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস লেখা নেই। আর আসাদ দিবসে নিয়ম রক্ষার যে আলোচনা হয় সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম থাকে, ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই শহীদ আসাদের ইতিহাস অজানা।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিউর রহমান বলেন, প্রতিবছর শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভিক ক্লাসে শহীদ আসাদকে নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে শহীদ আসাদের ইতিহাস সম্বলিত স্মরণিকা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু আগ্রহের অভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে আসাদের লড়াই, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ অজানা থেকে যাচ্ছে। আসাদ দিবস ঘিরে সোমবার সকালে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন শহীদ আসাদ। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) ঢাকা হল শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব খান সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। এরপর থেকেই এ দিনটি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হারিছ রিকাবদার (কালা মিয়া) বলেন, শহীদ আসাদ আমাদের এলাকার সন্তান। এটা আমাদের গর্ব। গণঅভ্যুত্থানে আসাদের আত্মত্যাগের পথ ধরেই আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের পথ সুগম হয়েছিল। কিন্তু আসাদ দিবসে শুধু তার সমাধিতে ফুল দেওয়া আর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, এগুলো তার অবদানের তুলনায় নগণ্য।

শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. এ এম নূরুজ্জামান নুর বলেন, শহীদ আসাদ বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তাকে যেভাবে তুল ধরা দরকার ছিল তা হয়নি। ফলে আসাদ সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে না। আসাদ দিবসেই শুধু তাকে কেন্দ্র করে কিছু আলোচনা হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে আসাদ এক অপরিচিত ব্যক্তি। কিন্তু যাদের কারণে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ, আসাদ তাদের একজন।

আসাদ পরিষদ সূত্র জানায়, দিবসটি উপলক্ষে শহীদ আসাদ পরিষদ নরসিংদীর শিবপুরের ধানুয়ায় প্রভাতফেরি, শহীদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ও দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করবে। পরে শিবপুর সরকারী শহীদ আসাদ কলেজে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।