ছেলে সন্তান না হওয়ায় মেয়েকে হত্যার স্বীকারোক্তি বাবার

বাবা মো. জাহাঙ্গীর সিকদার ও জীবিত দুই কন্যাসহ তাদের মা
বাবা মো. জাহাঙ্গীর সিকদার ও জীবিত দুই কন্যাসহ তাদের মা

ছেলে না হয়ে মেয়ে ভুমিষ্ট হওয়ায় জন্মের ৪০ দিনের মাথায় পুকুরে ফেলে দিল বাবা। বরগুনায় নিজের মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মো. জাহাঙ্গীর সিকদার নামে এক ব্যক্তি। রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন। পরে আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মো. জাহাঙ্গীর শিকদার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ঘোছখালী গ্রামের বাসিন্দা।

আমতলী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছেলে সন্তান না হয়ে পর পর তিন মেয়ের জন্ম হওয়ায় ক্ষোভে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) আমতলীর গুলিশাখালী ইউনিয়নের ঘোছখালী গ্রামের বাড়ির পেছনের পুকুরে ফেলে ৪০ দিন বয়সী জিদনী নামে নিজের মেয়েকে হত্যা করেন মো. জাহাঙ্গীর শিকদার। এ ঘটনায় জিদনীর মা সীমা বেগম অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিদনীর বাবা জাহাঙ্গীর শিকদারকে আটক করে পুলিশ। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এ ঘটনা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

এরপর জাহাঙ্গীর শিকদারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে রোববার সকালে আমতলীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, ছেলের আশায় দুই মেয়ের পর তৃতীয় বারেও মেয়ে জন্ম নেওয়ায় জাহাঙ্গীর শিকদার ক্ষোভে ৪০ দিন বয়সী জিদনী নামের নিজের মেয়েকে পানিতে ফেলে হত্যা করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আমাদের এটা জানিয়েছেন। এরপর আমরা তাকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য পাঠালে তিনি আদালতে মেয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর সিকদার একটি পুত্র সন্তানের আশা করেছিলেন। এ কন্যা শিশু জন্মের পর থেকেই জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিল। প্রতিবেশীদের অভিযোগ কন্যা সন্তান জন্মের পর থেকেই জাহাঙ্গীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় এবং কন্যা সন্তানটি ছুঁয়েও দেখেননি তিনি।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাবা জাহাঙ্গীর সিকদার জিদনীকে নিয়ে ঘরে শুয়ে ছিল। এ সময় তার স্ত্রী সীমা বেগম এবং তার শাশুড়ি পারুল বেগম ঘরের বাইরে গৃহস্থালী কাজ করছিলেন। শিশুটির মা সীমা বেগম এবং নানী পারুল বেগম কাজ শেষে রাত ১১টার দিকে ঘরে প্রবেশ করে শিশু জিদনী ও তার বাবা জাহাঙ্গীরকে দেখতে না পেয়ে ডাক-চিৎকার দেন।

এতে প্রতিবেশীরা এবং বাড়ির অন্যান্য লোকজন ছুটে আসেন। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘরের পিছনের ডোবা থেকে কাথায় মোড়ানো বিছানাপত্রসহ জিদনীর লাশ উদ্ধার করে।