শনিবারের সরকারি ছুটি জনগণের সাথে প্রতারণা

মো. তারেক রহমান
মো. তারেক রহমান

আপনারা টিভি বা পত্রিকা মারফত দেখে থাকবেন, লক্ষাধিক পাসপোর্ট ঝুলায়ে আছে। অনেক ধর্ণা ধরেও সেবা পাচ্ছেনা গ্রাহক। লক্ষাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ঝুলে আছে। বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির আগে দেয়া সম্ভব না। লক্ষ লক্ষ গ্যাস সংযোগের ফাইল আটকে আছে। বলা হচ্ছে এগুলোতে এখন হাত দেওয়া যাবে না।

কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চুরি-চামারিতে লক্ষ লক্ষ বিদ্যুৎ বিলের সমস্য জটিলতর হয়েছে। সরকারি ব্যাংক গুলোতে লোকবল কম হওয়ায় সেবা নিতে হচ্ছে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে আছে নিষ্পত্তি না হওয়ায় সময় দিচ্ছেন লম্বা লম্বা ডেট ফেলে। সময় মত সিলেবাস শেষ করতে পারছেনা শিক্ষকেরা তাই আলাদা কোচিং সার্ভিস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। হাঁসপাতালে রুগীর উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। রেলওয়েতে যাত্রী বেড়েছে ভাড়া বেড়েছে সেবা পাচ্ছে না জনগন।

একটা সময় সরকারি বেসরকারি সবাই সপ্তাহে শুক্রবার ছুটি পেত। আজ সরকারি সেবা শাখা যা জনগণের টাকায় চলে, সেখানে জনগণের সেবা কমিয়ে সপ্তাহে দুদিন ছুটি নিয়েছে। বেতনের ক্ষেত্রেও তারা বেসরকারি চাকরি চেয়ে বেশি নিচ্ছে। প্রতিদানে কি আন্তরিকতা পেয়েছে এদেশের মানুষ।

এই যে এক দিন বেশি ছুটি নিল, বেশি বেতন নিল। বেশি ছুটি, বেশি বেতন নিয়ে কৃতজ্ঞতা থেকে তারা কি দূর্ণীতি কমিয়েছে? তারা কি ঘুষ-চুরি-চামারির অভ্যাস পরিত্যাগ করেছে.? কি বুদ্ধিতে এই সিদ্ধান্ত নিলেন? এর ব্যাখ্যাগুলো কিন্তু আজও স্পষ্ট ভাবে দেওয়া হয় নাই।

এর কারণে কি দূর্ণীতি কমানোর কোন লক্ষন খুজে পাওয়া যায়? এর কারণে স্মার্ট সেবার কোন লক্ষন পাওয়া যায়? এর কারণে কি তাদের কাজে আন্তরিকতা বেড়েছে? বরং প্রত্যেক রবিবারে আমরা দেখি সরকারি কর্মকর্তারা ৯টার জায়গায় ১১.৩০ মিনিটে অফিসে জয়েন করেন।

আচ্ছা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এই যে সিদ্ধান্ত নিলেন, মাঠ পর্যায়ে কি জনমত যাচায় করেছিলেন, যাদের টাকায় বেতন দেন এই সরকারি কর্মচারীদের? শনিবার দিনকে ছুটি দিলেন তাদের জনগণের সেবার সময় থেকে বঞ্চিত করলেন কেন? আপনি কি পেরেছেন বেসরকারি খাতে শনিবারে বন্ধ ঘোষনা করতে?

আমি মনে করি সরকারি ক্ষেত্রে কাজের যে জট, পাব্লিক সার্ভিসে যে ভোগান্তি, তা সপ্তাহে একদিন কার্যদিবস কমানোর যে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল তার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নের প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে সারা বিশ্বে কর্মঘন্টা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবা নিশ্চয়তায় কঠোরতা বেড়েছে। আর পাব্লিক সার্ভিস সেক্টরটা এমনই, তারা জনগণের চাকর, একেবারে নেহাত চাকর।

অথচ সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে এমন জায়াগায় তুলেছেন এই চাকরদের যে জনগনকে তাদের স্যার স্যার, হুজুর হুজুর, বলে তসবিহ জপতে হচ্ছে।

লেখার শেষ অংশে আবার ও বলতে চাই, শনিবার ছুটির মধ্যে জনগণের কোনই ভালায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি, শনিবার ছুটির সাথে স্মার্ট সেবার কথা যে বলা হয়েছিল তা পুরাই ভাওতাবাজি আর সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা, পাশাপাশি বেসরকারি চাকরীজীবীদের প্রতি এক বৈষম্য।

বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি চলমান বৈষম্য হ্রাসে ও পাব্লিক সার্ভিসের পূর্ণ সেবাঘন্টা নিশ্চিতকরণে অতি দ্রুত শনিবারকে পুনরায় পূর্ণ কর্মদিবস আর বৃহস্পতিবারকে অর্ধ কর্মদিবস হিসাবে ঘোষনা করতে হবে।

লেখক: যুগ্ম আহবায়ক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ