ঢাবি শিক্ষার্থীদের হল সংসদে নিয়ে নির্যাতন ছাত্রলীগের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে হল সংসদের রুমে নিয়ে পিটিয়ে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সাও কেড়ে নেয়ার অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে হল ছাড়া করা শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তাই তাদের সতর্ক করা হয়েছে-দাবি অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের। রোববার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে এই ঘটনা ঘটে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান। তবে মারধরের কথা অস্বীকার করেন অভিযুক্ত হল ছাত্রলীগের নেতারা।

অভিযোগ ‍উঠেছে, হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা আবছার হাসান রানা ও মুহাম্মাদ জিসানের নেতৃত্বে দুই শিক্ষার্থীকে প্রথমে মারধর ও পরে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। জানা গেছে, আবছার এফ আর হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী।

(বাঁ থেকে) অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আবছার হাসান রানা ও মুহাম্মাদ জিসান

ছাত্রলীগের মারধরের শিকার ওই দুই শিক্ষার্থীর নাম রাকিবুল হাসান ও সুমন। রাকিব ২য় বর্ষে ও সুমন প্রথম বর্ষে পড়েন। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা এখন হলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হল সূত্রে জানা যায়, সুমন ১১১ নম্বর ও রাকিব ১১৩ নম্বর কক্ষে থাকেন। রাতে সুমন তার কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন। তখন ছাত্রলীগ নেতা জিসান তাকে ঘুম থেকে তুলে হলের তিন তলায় নিয়ে যান। সেখানে আবছারের নেতৃত্বে তাকে একদফা মারধর করা হয়। তারপর গেস্টরুম ও হল সংসদের কক্ষে নিয়ে আরেক দফা মারধর করেন। একইভাবে রাকিবকেও ডেকে নেওয়া হয়। হল শাখা ছাত্রলীগের আফসার হাসান রানার নেতৃত্বে জহির, জুয়েল, লাভলু তাকে প্রথমে মারধর তারপর রড-স্ট্যাম দিয়ে ভয়ভীতি দেখেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমার এবং সুমনের সাথে ডাকসুর জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের ছবি ছিল। আর সেখান থেকে আমাদের সন্দেহ করে এবং ভোর ৫টায় আমাদেরকে ঘুম থেকে তোলে হল অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগ এবং হল সংসদের অনেকেই ছিল। তারা আমাদের রড-স্ট্যাম্প দিয়ে ভয় দেখায় এবং হল থেকে বের করে দেয়। যদি সামনে হল কমিটি না থাকতো, তাহলে নামাজ পড়ার কারণে আমাদের শিবির ব্লেইম দিয়ে মারা হতো বলে জানান তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুকে বিভিন্ন সময় লেখালেখি করি। নিরপেক্ষ থেকে লেখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে তা সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে চলে যায়। তাই আমাকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেয়।

সংবাদ সম্মেলন করছে ভুক্তভোগী রাকিবুল হাসান

মারধরের শিকার আরেক শিক্ষার্থী সুমন বলেন, আমার মানিব্যাগে সাড়ে তিন হাজার টাকা ছিল। আবছার ভাই, আমার মানিব্যাগ সার্চ করার নামে তিন হাজার টাকা নিয়ে নেন।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আবছার হোসেন রানা। তিনি বলেন, তারা (রাকিব ও সুমন) দুইজনে একটা মিটিং করতেছিল। আমরা গিয়ে খোঁজ নেই। তবে মারধরের শিকার দুইজন শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে ডেকে আনা হয় বলে জানা গেছে।

টাকা রেখে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কেন ওদের মানিব্যাগ খোঁজ করতে যাবো বলে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো টাকা নেয়নি’।

স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আশিকুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি এ রকম কোনো অভিযোগ পায়নি। তিনি প্রাধ্যক্ষ বা অন্য কোনো আবাসিক শিক্ষকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

হলের প্রধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এটা হলের ভেতরের ঘটনা। হল প্রশাসন দেখবে। তারা যদি কোনো সাহায্য চায়, তাহলে আমরা করবো।