যেমন ছিলো হাবিপ্রবি এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা

উত্তর বঙ্গের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। ১৯৯৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাত ধরে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম-এর নেতৃত্বে দ্রুত একাডেমিক, অবকাঠামো থেকে শুরু করে সব দিকেই ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে হাবিপ্রবিতে। এবারের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ছিলো তাঁর একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

গত ২ হতে ৫ ডিসেম্বর হাবিপ্রবি’র ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসকে ঢেকে দেয়া হয় নিরাপত্তার চাদরে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরায় আওতায় রাখা হয় পুরো ক্যাম্পাসকে। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে লাল-সবুজ বাতিতে আলোকসজ্জিত করা হয় ক্যাম্পাসের সম্মুখভাগকে, উম্মোচিত করা হয় দৃষ্টি নন্দিত প্রধান গেট, সার্বক্ষণিক চালু রাখা হয় নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক পানির ফোয়ারা।

পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ১০ টাকা ভাড়ায় শহর হতে ক্যাম্পাস পর্যন্ত চালু থাকে বাস সার্ভিস। মেসগুলোতে করা হয় ফ্রি থাকার ব্যবস্থা ও হোটেল গুলোতে প্রতিটি খাবারের দাম জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মোবাইল,ব্যাগ ইত্যাদি নিরাপদে রাখা,সিট প্লান, পরীক্ষার রুম দেখিয়ে দিতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে ছাত্রলীগ, রোভার স্কাউট, সাংবাদিক সমিতি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, গ্রীণ ভয়েস, ডিবেটিং সোসাইটি, সেজুতি সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠণ ও অনুষদীয় এসোসিয়েশনসমূহ।

‘ডি ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। সকাল ৯ হতে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত মোট ৪ শিফটে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ২টি শিফটের (ডি-১ ও ডি-২) পরীক্ষা অত্যান্ত সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্ন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় । তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় (১.৩০ হতে ৩.০০ টা) জালিয়াতির অভিযোগে মাহামুদুল হক শাকিল নামের (রোল ৪১৯৩৭৯) এক শিক্ষার্থী ও তাঁকে সহযোগিতা করার দায়ে আমিনুল ইসলাম নামের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ।

দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ভাঁজ ও দায়িত্ব অবহেলার করার কারনে অফিস সহায়ক আকলিমা খাতুন নামের এক কর্মচারীকে ভর্তি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয় । এছাড়া আর কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ।

তৃতীয় দিন ছিলো ‘বি’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা । এই দিন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে সকল ইউনিটের পরীক্ষা ।

সি’ ইউনিটের পরীক্ষা ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা। তিনটি শিফটে এই ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান,মানবিক ও বাণিজ্য সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এই ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়। সি ইউনিটের ৩য় শিফটের (১.৩০ হতে ৩.০০ টা) পরীক্ষা চলাকালীন রাকিবুল ইসলাম সুমন নামের একজনকে প্রক্সি দেয়ার অভিযোগে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলাও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিদিনের ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য বিভিন্ন কেন্দ্র সমুহ পরিদর্শন করেন হাবিপ্রবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম।

উপাচার্য বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন হয়েছে । পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি গড়ে ৭০-৭৫% এর মতো ছিলো । ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্রে করে এবার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছিল। এছাড়া খাবার হোটেল ও মেসগুলোতে কোন অনিয়ম হচ্ছে কি’না সে বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ টিম ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাহিরের সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষনে ছিলো। ভর্তি পরীক্ষায় সার্বিকভাবে সহযোগিতার করেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, বাস মালিক সমিতি, বিদ্যুত বিভাগ, মেস মালিক সমিতি, হোটেল মালিক সমিতি, ছাত্রলীগ, সাংবাদিকসহ, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। এজন্য আমি হাবিপ্রবি পরিবারসহ সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এবার একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটিতে আমরা সফল হয়েছি বলে মনে করি। আগামীতে আমরা আরও বিশেষ কিছু করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এবার ভর্তি পরিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য শহর হতে ক্যাম্পাস পর্যন্ত মাত্র ১০ টাকা ভাড়ায় বাস সার্ভিস চালু, ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেস গুলোতে ফ্রিতে থাকার ব্যবস্থাসহ হোটেলে খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্যও ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। পরীক্ষা চলাকালীন অভিভাবকদের বসার জন্য ছিল চেয়ার, ফ্রেশ হওয়ার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ওয়াশরুম এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

রাজশাহী থেকে আগত এক পরীক্ষার্থীর বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি পরীক্ষার আগের রাতেই ফুলবাড়ির এক বন্ধুর বাসায় উঠেছিলাম । সকালে ফুলবাড়ি থেকে দিনাজপুর শহরে এসে নামতেই পাশের এক ফলবিক্রেতা বললো আপনি কি পরীক্ষা দিতে এসেছেন? হ্যাঁ বলতেই এক অটো ডেকে দিলো। ট্রাফিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের ভেতরে নেয়া, বাইরে ব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল রাখার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সার্বিক ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো ছিল। এখানে পরীক্ষার্থীর সাথে কোন অভিভাবক না আসলেও সমস্যা ছিলো না। দিনাজপুর শহর, ক্যাম্পাস, সড়কগুলোতে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও র‌্যাবের গাড়ি ছিলো চোখে পড়ার মতো। যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

আরও কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলে অনেক আন্তরিক। পরীক্ষার কক্ষ খোঁজার জন্য ঘুরে বেড়াতে হয়নি। ছাত্ররা নিজেরাই এগিয়ে এসে পরীক্ষার কেন্দ্র পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে। সঙ্গে আনা ব্যাগ, মোবাইল খাতা পত্র নিয়েও কোন সমস্যা হয়নি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হেল্প ডেস্ক ছিলো সেখানেই রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। ক্যাম্পাসটি ছোট হলেও অনেক সাজানো ও গোছানো। আমার ছেলে মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন যেন তাঁরা এখানে চান্স পায় ।

ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. খালেদ হোসেন বলেন, বড় কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছি । যারা বিভিন্নভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সকলের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আগামীতেও আপনাদের কাছ থেকে সকল সহযোগিতা পাবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি ।