ক্যানসারের কাছে হেরে গেলেন তিতুমীর কলেজের সাদিয়া

মেয়েকে বাঁচাতে আর বাবা-মায়ের আকুতি নয়, এবার তাদের আহাজারিতে ভাসিয়ে চলে গেলেন সাদিয়া সুলতানা। সরকারি তিতুমীর কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া। ক্যান্সারের কাছে হেরে এবার পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে।

শনিবার ভোর সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের আলোক হেলথ কেয়ারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কোলন ও ওভারি ক্যানসারে ভুগে শেষে ভোরে মারা গেছেন তিনি।

দুপুর ১২টায় কলেজ ক্যাম্পাসে সাদিয়ার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে বলে তার সহপাঠী ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে ২০১৮ সালে মে মাসে পরীক্ষার কেন্দ্রে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সাদিয়া। পরে তাকে প্রথমে উত্তরা মহিলা মেডিকেল ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন সেখানে চিকিৎসার পরেও অবস্থার অবনতি হলে উত্তরার আর এমসি হাসপাতালে জরুরি অপারেশন করা হয়। অপারেশনে কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে। মাঝে কিছুদিন ভালো ছিলও সাদিয়া। নিয়মিত নিজের ক্লাস ও টিউশনিও করেছে। কিন্তু ফের রমজানের আগে আবার ব্যথা শুরু হলে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বিদ্যুতের তত্ত্বাবধানে আলোক হাসপাতালে বিশোর্ধ্ব সাদিয়ার চিকিৎসা চলছিল।

কয়েক দিন আগে সাদিয়ার মা কামরুন নাহার জানান, ৮টি কেমোথেরাপির পর আরও একটি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে ক্যানসার সমস্ত পেটে ও জরায়ুতে ছড়িয়ে পড়ছে। এর মাঝে আমরা কলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আবার দেশে চলে আসি। এখন মেয়ের পা ফুলে মোটা হয়ে গেছে। পেটও ফুলে গেছে। ব্যথায় অস্থির। এক ঢোক পানি ছাড়া কিছুই খেতে পারছে না। আমার মেয়েটা সব সময় মানুষের সেবায় কাজ করেছে। মানা করলেও অন্যকে রক্ত দিত।

শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন সাদিয়া বাবা মঈন উদ্দিন হেলালী। বাসা রাজধানীর বিমানবন্দরের কাওলা এলাকায়। সেখানেই একটি দোকান আছে তার। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যাতে কোনো মেয়েকে এমন রোগ না দেয়। মেয়ের কষ্ট দেখে আর থাকতে পারছি না।

কিছুদিন আগেও বন্ধুবান্ধব নিয়ে মরণব্যাধি ‘ক্যানসার সচেতনতা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান’ কর্মসূচি করেছিলেন সাদিয়া সুলতানা। নিজেও একাধিকবার মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। একনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন স্বেচ্ছায় রক্তদানের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাঁধনের কার্যক্রমে। কিন্তু সেই শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানাই আজ মরণব্যাধি ক্যানসারের কাছে পরাজিত হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।