গণরুম নির্যাতনের আন্দোলনে ডাকসু নেতার ইউটার্ন!

ইউটার্নের বিষয়টি

শিক্ষার্থীদের সিটের অধিকার নিশ্চিতের পক্ষে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়ার আড়াই মাস পরে ইউটার্ন নেয়ার অভিযোগ সেই ডাকসু নেতা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকতের বিরুদ্ধে। এবার শিক্ষার্থীদের গণরুম-গেস্টরুমবিরোধী প্রচারণা বাধা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

এর আগে নিজেই সিটের অধিকার চেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করেছেন। তবে এবার সেই একই ধরনের কর্মসূচীতে বাধা দেওয়ায় একে ‘ইউটার্ন’ কিংবা স্ববিরোধী অবস্থান হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘গণরুম-গেস্টরুম ও সন্ত্রাসবিরোধী’ স্থিরচিত্র প্রদর্শনী করেছে ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ নামক আন্দোলনের মঞ্চ।

পড়ুন: একসময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতার অভাবে ভরা জীবন!

ঢাবির সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসিক হলগুলোতে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব। এই দখলদারিত্বের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো যুগ যুগ ধরে সিট দখল ও সিট বাণিজ্য করে আসছে যা ১ম বর্ষ থেকে বৈধ সিট পাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের সব থেকে বড় অন্তরায়। যার ফলে গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের মুক্ত করাই এ সংগঠনটি লক্ষ্য বলে জানা গেছে।

তবে, নবীন শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা রাজনীতির বিষয়ে ধারণা রেখে হলে উঠে যার জন্য সংগঠনটি খ ইউনিটের ভাইভাকে সামনে রেখে তারা এই আয়োজন করেছে।

পড়ুন: ৭ মামলার আসামি সেই কাউসার ইংরেজিতে পড়বেন

জানা যায়, ‘গণরুম-গেস্টরুম ও সন্ত্রাসবিরোধী’ ৪ দিনব্যাপী স্থির চিত্র প্রদর্শনীর মঙ্গলবার ছিল শেষ দিন। ১ম বর্ষ হতেই প্রশাসন কর্তৃক বৈধ সিট বরাদ্দ এবং গেস্টরুম নামক টর্চারসেল বাতিলহর ৬ দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংগঠনটি স্থিরচিত্র প্রদর্শনী করে।

মঙ্গলবার সকাল দশটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবির) কলাভবনের সামনে স্থিরচিত্র প্রদর্শনী শুরু হলে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে শেষ হয়। বৈধ সিট আমার অধিকার’ মঞ্চের মুখপাত্র আরমানুল হক ও উমামা ফাতেমা।

মঞ্চের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১ম বর্ষ হতেই প্রশাসন কর্তৃক বৈধ সিট বরাদ্দ করা, গেস্টরুম নামক টর্চারসেল বাতিল, সিট বরাদ্দে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, অবৈধভাবে সিট দখলকারীদের অবিলম্বে হল ত্যাগ , পলিটিক্যাল গণরুম বাতিল।

পড়ুন: আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হলে অনেক এমপি-মন্ত্রীরও যাবজ্জীবন হবে!

৪ দিনব্যাপী ‘গণরুম-গেস্টরুম ও সন্ত্রাসবিরোধী’ স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, আধুনিক ভাষা ইনিস্টিটিউটের শিক্ষিকা শ্যামলী বড়ুয়া, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অণিক রায়, ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ জামিল, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন প্রমুখ।

এ বিষয়ে আরমানুল হক বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে গেস্টরুম-গণরুম ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছি। তার ধারাবাহিকতায় আমরা এই স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য, নবীন যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে তারা যেন হলের দখলদারিত্বের বিষয়টি লক্ষ্য রেখে হলে উঠে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা ভর্তি হোক কিন্তু প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের পিছনে যে অনেক কিছু আছে তা যেন তারা জেনে ভর্তি হয়। তারা যেন পলিটিক্যালি হলে না উঠে । তারা যেন বৈধ ভাবে হলে উঠে।

পড়ুন: গতবারও বেস্ট এ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল হেলাল, এঁকেছিল লঞ্চঘাট

তবে আয়োজনের চতুর্থ দিনে দুপুর একটার দিকে স্থির চিত্র প্রদর্শনীতে বাধা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতা এবং ছাত্রলীগের গত কমিটির সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।

সৈকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুপুর একটার দিকে কলাভবনের সামনে অনুষ্ঠেয় স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে বাধা দেন এবং উক্ত স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে ছাত্রলীগ বিরোধী কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসময় তানভীর হাসান সৈকত মঞ্চের আহ্বায়ক আরমানুল হককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন এবং শিবির বলে অপপ্রচার চালান।

পড়ুন: ১১তম গ্রেড: সাফ জবাব দিলেন প্রাথমিক সচিব

এ বিষয়ে সংগঠনের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘দুপুরে সৈকত এখানে এসে বাধা দেয়। সে এসে আমাদের বলে, আমরা যে প্রদর্শনী করছি তা নাকি ছাত্রলীগবিরোধী। তখন আমরা বলেছি হলে বর্তমানে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ থাকায় যত নিপীড়ন-নির্যাতন হলে হয় সবতো ছাত্রলীগই করছে। কিন্তু এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তখন তিনি আমাকে ‘শিবির আখ্যা’ দেন। অথচ আমি ছাত্র ফেডারেশন করি। আমি ছাত্র ফেডারেশন এর অর্থ সম্পাদক। আমি শিবিরের রাজনীতিকে ঘৃণা করি। এ সময় উনি আমাকে দেখে নিবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, এর আগে আবাসিক সঙ্কট ও গণরুম সমস্যা সমাধানের দাবিতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নিজের সিট ছেড়ে গণরুমে উঠেছিলেন সৈকত। পরে ৩ সেপ্টেম্বর গণরুম সমস্যা সমাধানকল্পে ভিসির আশ্বাসে অবস্থান পরিবর্তন করেন তিনি। এবার গেস্টরুম-গণরুমের নৃশংসতা নিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে বাধা দিয়ে ইউটার্ন নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন ডাকসুর এই নেতা।

পড়ুন: ডাকসুর ওয়াটার পোলোর চ্যাম্পিয়ন একাত্তর, রানার্স আপ জগন্নাথ হল 

ইউটার্নের বিষয়টি অস্বীকার করে তানভীর হাসান সৈকত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি যদি কারো সমালোচনা করতে হয় তাহলে ভালো খারাপ দুটোই করতে হয়। আমি দেখলাম তারা সব ছাত্রলীগবিরোধী চিত্র প্রদর্শনী করছে। ছাত্রলীগের ভালো কাজগুলোও তো আছে। তবে আমি তাদের কোনো হুমকি-ধমকি দেইনি। আমি তাদের বড়ভাই হিসাবে বুঝিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখানে যারা এগুলো দেখছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন। এই নবীনরা এগুলো দেখার কারণে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা এগুলো দেখার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে।’

পড়ুন: মূল্যবৃদ্ধির গুজবে মানুষগুলো তো মুখ পোড়াবেই!

এদিকে স্থির চিত্র প্রদর্শনীর কারণে আতঙ্কে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ভাইভা দিতে আসা নবীন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে রাজনীতির নোংরা দিক তারা দেখেছেন। যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।

এ বিষয়ে নোয়াখালী থেকে ভাইভা দিতে আসা এক নবীন শিক্ষার্থী আলামিন বলেন, ‘খবরের কাগজ ও টিভির মাধ্যমে আগের থেকে ঢাবির রাজনীতির সাথে কিছুটা পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এখানে এসে এইসব স্থিরচিত্র দেখে আরো স্পষ্ট হলাম। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন জায়গায় এগুলো থাকা উচিত না।