ভর্তিচ্ছুদের দাবি আদায়ে এক কাতারে চবি ছাত্রলীগ-ছাত্রজোট

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসির মানোন্নয়নের ফলের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় জায়গা পেয়েও ভর্তির ‘অযোগ্য’ বিবেচিত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ-ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।

সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে ভর্তির সুযোগের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনপত্র জমা দেওয়াসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন শেষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলো স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। এতে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী) এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ)। মানববন্ধন শেষে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের নিকট এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবির হাসান তিতাসের সঞ্চালনায় এদিন মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আইরিন সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক সায়েমা আক্তার নিশো,ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ নেতা ধীষন প্রদীপ চাকমা, ছাত্রলীগ নেতা ইমাম উদ্দিন ফয়সাল পারভেজ ও প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয়। মানববন্ধনে দুই শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হয়েছে। কিন্তু সার্কুলারে অসংগতির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছেনা। যেখানে অস্পষ্টতা থাকে, সেখানেই জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত, তাদের অভিভাবকরা আসছে। আমরা তাদেরকে স্পষ্ট কোন জবাব দিতে পারছি না। কতটা অসহায় আর নির্মমতার শিকার হলে এভাবে তারা সাহায্য চাইতে পারে। যেহেতু ছেলেমেয়েগুলোকে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে।

মানববন্ধনে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ছাত্রলীগ সবসময় যৌক্তিক দাবির পাশে থাকে। এ ঘটনায় কাউকে দোষ দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া উচিত নয়। জটিলতা দূর করে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করুন। কারো চোখের জল নয়, আমরা চাই সুষ্ঠু সমাধান। উপাচার্য মহোদয় সবার সাথে সম্মিলিত ভাবে এ বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশা করি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আইরিন সুলতানা বলেন, ভুল প্রশাসনের হয়েছে, শিক্ষার্থীদেরও হয়েছে। ভুল শুধরে নিয়ে তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দিন। তাদের স্বপ্নটাকে ভেঙে দিয়ে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবেন না।

সমাজতাত্ত্বিক ছাত্রফন্টের সাধারণ সম্পাদক সায়মা আক্তার নিশো বলেন, এটা একটি যৌক্তিক দাবি। ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার আগে বলা হয়েছে তোমরা পরীক্ষা দিয়ে দাও, পরে বিষয়টি আমরা দেখব। এখানে কি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে নাকি। যেখানে টাকা নেওয়া হবে, কিন্তু যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও ভর্তি নেওয়া হবে না। যে ভুল হয়েছে তার দায় প্রশাসনের, তার দায় শিক্ষার্থীরা নেবে না।

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ধীষণ প্রদীপ চাকমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হয়। যারা ভর্তি পরীক্ষায় মেধার প্রমাণ দিয়েছে তাদেরকে অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার দায় মানোন্নয়নকৃত শিক্ষার্থীদের উপর না চাপিয়ে এবছর তাদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।

প্রসঙ্গত, এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে চবির বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার পরও একদল শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছেন না, যারা গতবারও ভর্তির আবেদনের যোগ্য ছিলেন। এরা যে ভর্তি হতে পারবে না তা বিজ্ঞপ্তিতে বলা জানানো হয়েছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। কিন্তু এই শিক্ষার্থীরা বলছে, বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। তাছাড়া অযোগ্য হলে তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলো কেন। এসব দাবি নিযে গত ৩ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।