বাবরি মসজিদ রায়ের পর কবিতা লিখলেন মমতা

তিন দিন আগে তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে দলের কোর গ্রুপের বৈঠক ডেকে দিদি বলেছিলেন, অযোধ্যা রায় স্পর্শকাতর বিষয়। রায় ঘোষণার পর কেউ যেন তা নিয়ে আলটপকা মুখ না খোলেন। যা বলার তিনিই বলবেন।

শনিবার অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার পর দেখা গেল তৃণমূলের নেতারা কথা রেখেছেন। কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। দিনের শেষে দেখা গেল, দিদি একটা কবিতা লিখে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। তাতে ‘অযোধ্যা’, ‘বাবরি মসজিদ’, ‘সুপ্রিম কোর্ট’ এ সব কোনও শব্দের উল্লেখ নেই। কবিতায় মোদ্দা একটা কথা বলা হয়েছে, তা হল- ‘অনেক সময় কথা না বলেও অনেক কথা বলা যায়’।

শনিবার সকালে অযোধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের মোদ্দা অর্থ হল- বিতর্কিত জমি পাবে হিন্দুরাই। মুসলিমরা মসজিদ বানানোর জন্য অন্যত্র জমি পাবে।

সন্দেহ নেই এতে গেরুয়া শিবিরের অভীষ্ট সিদ্ধ হয়েছে। বিপরীতে মুসলিম সংগঠনের অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। যেমন, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের আইনজীবী জাফর ইয়াব জিলানি বলেছেন, গোটা রায় নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। আরও চড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, এই রায়ে তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকেনি। এমনকি মসজিদের জন্য পাঁচ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করা ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কিছুটা প্যাঁচেই পড়েছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানালে সংখ্যাগুরুরা খুশি হবেন ঠিকই, কিন্তু তাতে সংখ্যালঘু মানুষের কাছে তা কী বার্তা পাঠাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বড় কথা হল, বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কই তৃণমূলের অন্যতম রাজনৈতিক পুঁজি। তাই রায়কে স্বাগত জানানো তৃণমূলের পক্ষে রাজনৈতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বইকি। বিশেষ করে যখন মিমের মতো মুসলিম দল বাংলায় পা জমানোর চেষ্টা করছেন।

তা ছাড়া তৃণমূল হয়তো এও বুঝতে পারছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে কোনও বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে না। কারণ, তার পরেও উগ্র হিন্দু ভোট বিজেপি-র দিকেই থাকবে। তুলনায় চুপ থাকলে উদার হিন্দু ভোট এবং সংখ্যালঘু শ্রেণি-এই দুই অংশকেই পাশে পাওয়ার আশা থাকবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এই কৌশলগত অবস্থান নিয়েছেন, তখন বিজেপি তাঁকে খোঁচা দেওয়ার সুযোগ ছাড়তে চায়নি। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, কোনও ভাল জিনিস ভাল ভাবে দেখতে পারে না তৃণমূল। তা সে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক বা কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার। কারণ, তৃণমূলের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করার তাগিদ রয়েছে। (সূত্র: দ্য ওয়াল)