সেই জর্দা ব্যবসায়ী এবারও সেরা করদাতার তালিকায়

ব্যবসায়ী শ্রেণিতে আবারও সেরা করদাতা হয়েছেন সেই জর্দা ব্যবসায়ী মো. কাউছ মিয়া। তার হাকীমপুরী জর্দা দেশখ্যাত। ২০০৮ সাল থেকে তিনি শীর্ষ করদাতার তালিকায় নাম লেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এর আগে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারও তাকে শীর্ষ করদাতা হিসেবে পুরস্কার দিয়েছিল তাকে। ১৯৫৮ সাল থেকেই তিনি তৎকালীন সরকারকে কর দিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়াও এ বছর ৭৬ ব্যক্তি করদাতা ও ৬৭টি প্রতিষ্ঠান কর কার্ড পাচ্ছে। সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও দ্বিতীয় সেরা করদাতা এই শ্রেণিতে আছেন। আর বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সেরা করদাতা হয়েছেন সিনিয়র সিটিজেন শ্রেণিতে। এ ছাড়া আইনজীবী শ্রেণিতে সেরা করদাতার তালিকায় আছেন সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, আইনজীবী রফিক-উল-হক, খেলোয়াড় হিসেবে তিন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, সাবিক আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, অভিনেত্রী হিসেবে ফরিদা আক্তার ববিতা, গায়ক হিসেবে তাহসান রহমান খান ও গায়িকা মমতাজ।

প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে সেরা করদাতা হিসেবে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এই তালিকা গতকাল বুধবার প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারের তালিকায় ৭৬ ব্যক্তি করদাতা ও ৬৭টি প্রতিষ্ঠান আছে। তাঁরা কর কার্ড পাবেন। ১৪ নভেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেরা করদাতা ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে কর কার্ড তুলে দেওয়া হবে। গত অর্থবছরে দেওয়া বার্ষিক কর বিবরণীর ভিত্তিতে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

কর কার্ড পাওয়া ব্যক্তি করদাতারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন। যেমন বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিংয়ে অগ্রাধিকার; কর কার্ডধারী নিজে ও তাঁর স্ত্রী বা স্বামী, নির্ভরশীল সন্তানের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার; আকাশ, রেল ও জলপথে সরকারি যানবাহনে টিকিট প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ। এই কর কার্ডের মেয়াদ হবে এক বছর।

কোন শ্রেণিতে কারা পেলেন
জ্যেষ্ঠ নাগরিক: এই শ্রেণিতে আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, খন্দকার বদরুল হাসান, রাজশাহী কর অঞ্চলের অনিতা চৌধুরী, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১–এর আলীহোসাইন আকবরআলী ও ঢাকা কর অঞ্চলের মোস্তাফিজুর রহমান।

গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: লে. জেনারেল (অব.) আবু সালেহ মো. নাসিম, এস এম আবদুল ওয়াহাব ও কুমিল্লার আল মামুন সরকার।

প্রতিবন্ধী: চট্টগ্রামের সুকর্ণ ঘোষ, ঢাকার আকরাম মাহমুদ ও সিলেটের মামুনুর রশিদ।

নারী: ঢাকার রুবাইয়াত ফারজানা হোসেন, লায়লা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, পাবনার রত্না পাত্র ও মাহমুদা আলী শিকদার।

তরুণ: নাফিস সিকদার, গাজী গোলাম মর্তুজা, মেহেদী হাসান, আবু রায়হান রুবেল ও জুলফিকার হোসেন মাসুদ রানা।

ব্যবসায়ী: ঢাকার মো. কাউছ মিয়া, সৈয়দ আবুল হোসেন, কামরুল আশরাফ খান, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ কামাল ও ঢাকার আসলাম সেরনিয়াবাত। বেতনভোগী শ্রেণির পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই একই পরিবারের। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ইউসুফ, খাজা তাজমহল ও এম এ হায়দার হোসেন। অন্যরা হলেন ইনসেপটা ফার্মার আব্দুল মুক্তাদির এবং চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা।

চিকিৎসক: সেরা পাঁচ করদাতা হলেন এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, এম এ এম মোমেনুজ্জামান, নার্গিস ফাতেমা ও শামসুল আরেফিন।

আইনজীবী: এই শ্রেণির সবাই কর অঞ্চল ৮-এর। তালিকায় আছেন সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, নিহাদ কবির, আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ও রফিক-উল-হক।

প্রকৌশলী: ঢাকার রেজাউল করিম, শাহ মোহাম্মদ হান্নান ও চট্টগ্রামের এস এম আবু সুফিয়ান। স্থপতি শ্রেণিতে ফয়েজ উল্লাহ, রফিক আজম ও গোলাম আজম সিজার।
হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউনট্যান্ট): ঢাকার মোক্তার হোসেন, মনজুরুল আলম ও মোহাম্মদ ফারুক।

নতুন করদাতা হিসেবে সেরা হলেন ঢাকার মতিউর রহমান, সিলেটের সৈয়দা জমিলা বেগম, মিরাজুল ইসলাম, ঢাকার হোসনে নুজহাত, নারগিছ আকতার, মিয়া মো. রেজুয়ান কবির ও সোনিয়া সারহা পিংকি। খেলোয়াড় শ্রেণিতে আছেন তিন ক্রিকেটার। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। অভিনেতা-অভিনেত্রী: আনিসুল ইসলাম হিরু, ফরিদা আক্তার ববিতা ও সাকিব খান।

গায়ক-গায়িকা: তাহসান রহমান খান, এস ডি রুবেল ও মমতাজ বেগম।

অন্যান্য শ্রেণিতে নাম আছে শওকত আলী চৌধুরী, আকতার মতিন চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম মজুমদার।

প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সেরা
ব্যাংকিং: ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এইচএসবিসি, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইউসিবিএল। অব্যাংকিং আর্থিক: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড।

প্রকৌশল: বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, খুলনা শিপইয়ার্ড ও বিএসআরএম স্টিলস।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক: নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।

জ্বালানি: তিতাস গ্যাস, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. (জিটিসিএল)।

পাটশিল্প: আকিজ জুট মিলস, জনতা জুট মিলস ও সুপার জুট মিলস।

স্পিনিং ও টেক্সটাইল: কোটস বাংলাদেশ, বাদশা টেক্সটাইলস, এ সি এস টেক্সটাইলস, নোমান টেরিটাওয়েল মিলস, অ্যাপেক্স টেক্সটাইল, এনভয় টেক্সটাইল ও ফখরুদ্দীন টেক্সটাইল মিলস।

ওষুধ ও রসায়ন: ইউনিলিভার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেনাটা লিমিটেড।

প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া: মিডিয়াস্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড, ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড ও মিডিয়া ওয়ার্ল্ড।

আবাসন: র‌্যাংগস প্রপার্টিজ, ইকুইটি প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও বে ডেভেলপমেন্টস।
তৈরি পোশাক: ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার, রিফাত গার্মেন্টস, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, হা-মীম ডেনিম, দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার, প্যাসিফিক জিনস ও ফোর এইচ ফ্যাশন।

চামড়াশিল্প: বাটা সু, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও এটলাস ফুটওয়্যার।

টেলিযোগাযোগ: গ্রামীণফোন।

অন্যান্য শ্রেণিতে আরও আছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স, সাধারণ বীমা করপোরেশন, তমা কনস্ট্রাকশন, এস এন করপোরেশন, মেসার্স এ এস বি এস, মেসার্স ছালেহ আহম্মদ, ঢাকার ভাটারার ওয়ালটন প্লাজা, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, মোংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, বেসরকারি সংস্থা আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ ও আর এস ট্রেডিং।