এসএম হল সংসদের উদ্যোগে ক্যান্টিন সমস্যার সমাধান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হলগুলোর মধ্যে অন্যতম সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল। দেশের বিভিন্ন সংকটে এসএম হলে শিক্ষার্থীদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যবাহী হলটি আবাসন সংকট, খাবারের নিম্নমান সহ নানা কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছিল। তবে হল সংসদ নির্বাচনের পর হল সংসদের নেতাদের প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ সংকট কাটিয়ে উঠছে আবাসিক হলটি। এরই ধারাবাহিকতায় হলের খাবারের মান উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি নিয়োগ করা হয়েছে নতুন ক্যান্টিন ক্যাটারার (মালিক)।

দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যান্টিনের যাবতীয় অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের। ক্যান্টিনের খাদ্যের মান, অপর্যাপ্ত খাদ্য, সন্তোষজনক মূল্য, স্বাস্থ্যকর ক্যান্টিন পরিবেশসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল হল ক্যান্টিন। শিক্ষার্থীরা হল কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার প্রশ্ন তোলার পরও দৃশ্যমান কোন সমাধান পায়নি শিক্ষার্থীরা।

অবশেষে হল সংসদের আন্তরিক তৎপরতায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে খাদ্যের মান, পর্যাপ্ত খাদ্য, সন্তোষজনক মূল্যসহ বিভিন্ন শর্তে গত ১৩ অক্টোবর নতুন ক্যাটারার নিয়োগের মাধ্যমে হল ক্যান্টিন সমস্যার সমাধান হয়।

ক্যান্টিন সমস্যার সমাধানে শুরু থেকে তৎপর ছিলেন হল সংসদের জিএস মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার। তিনি বলেন, ‘এসএম হলের ছাত্রদের মৌলিক অধিকার নিশ্চতকরণে হল ছাত্র সংসদ দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইতিমধ্যে খাবার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা হয়েছে এবং তা আরো উন্নত করার লক্ষে ডাইনিং সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতে হল ক্যান্টিনে পাওয়া যাবে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার। পাশাপাশি দোকানেও রাত ১১ টা পর্যন্ত খাবার মিলবে৷ ডাইনিং চালু হলে সেখানেও মাথাপিছু ভর্তুকির ভিত্তিতে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।’

হল সংসদের ভিপি মুজাহিদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘হলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আবাসন এবং খাবার সংক্রান্ত সমস্যা। আমরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে খাবার সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করেছি। অপ্রীতিকর কোন ঘটনার শঙ্কা নেই তবে কারো যদি আর্থিক সমস্যা বা অন্য যেকোন সমস্যা থাকে তা হল সংসদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল।’

এজিএস নওশের আহমেদও একই সুরে বলেন, ‘বর্তমানে চাঁদাবাজি বা ফ্রিতে খাবার খাওয়ার মত কোন ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার শঙ্কা নেই, যদিও কেউ করে থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসএম হলকে অন্য হলের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা ছাত্রসংসদ বদ্ধ পরিকর।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী বকেয়া খাবার খেয়ে টাকা না দেওয়া, চাঁদা দাবি করা এবং হুমকি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্যান্টিন ম্যানেজার পালিয়ে যায়। আর তাতে দুর্ভোগে পড়ে হলের শিক্ষার্থীরা। এই ছাড়াও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা যায়।

হল সংসদের সদস্য সামসুল আরেফিন সেজান বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা হল সংসদ এসএম হলের যে কোন প্রয়োজন এবং সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করেছি। আবাসন সংকটের সাথে সাথে আমরা হল ক্যান্টিনের এই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রতিটি কার্যনির্বাহী সভায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি এবং হলের আনুষাঙ্গিক বিপুল ইতিবাচক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে আমরা আগের চেয়ে আরও উন্নত এবং মান সম্মত ক্যাটারার নিয়োগ করেছি। এখন সকলের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় ক্যান্টিনটি সর্বাত্মক মান বজায় রাখবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাবাত রেজা খান বলেন, ‘হল সংসদকে তাদের আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ জানাই, ক্যান্টিনের মান আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হয়েছে।’

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা হল সংসদকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্যান্টিন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এমন ধারা অব্যাহত থাকবে বলে শিক্ষার্থীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।