সুনীল ছেত্রীকে নিয়েই যত ভাবনা

কোচ জেমি ডে ভারতের সুনীল ছেত্রী সম্পর্কে জানতেন না। প্রতিপক্ষ হিসেবে তাকে পাননি কখনো। মামুনুল ইসলাম, অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া, ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপুরাই তার সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন জেমিকে। জেমিও তাই ভারতের খেলার ভিডিও দেখে নিয়েছেন। কিন্তু সুনীল ভারতের আক্রমণভাগের অনেক বড়ো অস্ত্র হলেও এ নিয়ে বেশি কথা বলতেও রাজি নন জেমি। মুখে না বলেও ব্রিটিশ জেমি তার নোটবুকে সুনীলকে রোখার ছক কষে রেখেছেন।

সুনীল বহুবার বাংলাদেশের হৃদয়ে পেরেক ঠুকেছেন। এমনও দিন গেছে, বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেই যাচ্ছে। ঠিক তখনই সুনীল নামের অদম্য ঘোড়া টগবগিয়ে বাংলাদেশের জালে ছুটে গিয়েছেন। তার কথা উঠতেই পুরোনো স্মৃতি টেনে আনলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। ২০১৩ সালে নেপালের হলচুকের মাঠে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ রেফারির শেষ বাঁশির অপেক্ষায়। ঠিক তখনই এই সুনীল দুর্দান্ত একটা সেটপিস আদায় করে গোল দিয়ে ভারতকে বাঁচিয়েছিলেন।

এই ফুটবলার ১২০ কোটি মানুষের দেশে দীর্ঘদিন জাতীয় পতাকা বুকে নিয়ে দেশের ফুটবলের সেবা করে যাচ্ছেন। বলা হয়, ভারতীয় ফুটবলে গত তিন দশকের সেরা স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী। ভারতীয় ফুটবলের কান্ডারি। ১৪ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলে ১১২ ম্যাচে ৭২টি গোল করেছেন। ভারতের সাবেক স্ট্রাইকাররাও সুনীলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

সাবেক তারকা স্ট্রাইকার প্রশান্ত ব্যানার্জি, সুব্রত ভট্টাচার্য, শিশির ঘোষ, আই এম বিজয়ন, বাইচুং ভুটিয়া, পরের সময়ে মেহেতাব হোসেন, রহিম নবীরা পালাক্রমে ভারতীয় জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো না কোনোভাবে ছাপিয়ে গেছেন সুনীল ছেত্রী।

সব সময় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছেন। কখনো প্রতিপক্ষ বক্সের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে মাঝমাঠে নেমে এসে বল টানার চেষ্টা করেছেন। ঢাকার মাঠের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার শেখ মো. আসলামের খেলার ধরনও ছিল এমন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে সুনীলের একটা মিল পাওয়া যায়। ক্যারিয়ারে কয়েকবার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। মাশরাফি কখনো দমে যাননি। সুনীলও তাই। সেনাপরিবারের সন্তান, কীভাবে নিজেকে যুদ্ধের ময়দানে লড়াকু ভূমিকায় দাঁড় করানো যায়, সেই মন্ত্র জানা আছে তার। স্পট জাম্প, দুরন্ত গতি, পায়ের জোরালো শট, প্রতিপক্ষের সামনে ত্রাস সৃষ্টি করা, সব সময় নিজেকে পাহারামুক্ত রাখার কৌশলটা ভালো বোঝেন তিনি।

সাফ অঞ্চলে বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশের বিপক্ষেই তার গোল আছে। ট্রফিও এনে দিয়েছেন ভারতকে। পর্তুগালের ফুটবলে সুযোগ পেলেও খেলতে না পারায় কোনো আফসোস নেই। তবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলে সুনীল যেন অন্য মাত্রায় চলে গেছেন।

সুনীলের সঙ্গে যারা স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলতে শুরু করেছিলেন, তারা ক্যারিয়ারের বাতি নিভিয়ে কোচ হয়েছেন কিংবা অবসরে চলে গেছেন। কিন্তু সুনীল আছেন নিজ মহিমায়। কেমন করে সম্ভব এটি? জানা গেছে, ফিটনেস নিয়ে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করেন। শৃঙ্খলার বাইরে একটুও যান না। এমন স্ট্রাইকার যে দেশে রয়েছে, সেখানকার কোচের আর চিন্তা কী? চিন্তা করবেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা। গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা বলছিলেন, ‘আমি সুনীলের বিপক্ষে খেলিনি। তার বিপক্ষে খেলব বলে রোমাঞ্চ অনুভব করছি। এমন একজনকে আক্রমণভাগে পেলে নিষ্ক্রিয় করতে আমিও নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত।

মামুনুল ইসলাম বললেন, ‘সুনীল একাই ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ সংবাদ সম্মেলনে সুনীল অবশ্য বিনীয় জবাবে বলেছেন, ‘এটা সত্য নয়। গোল নয়, আমি ৩ পয়েন্ট পেতে চাই। অতীতে কী করেছি, সেটা কাজে আসবে না।’