মেধাবী জাতি গড়তে প্রতিদিন একটি করে ডিম

‘বিশ্ব ডিম দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা

সব বয়সী মানুষকে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার আহ্বানের মধ্যে দিয়ে দেশে পালন করা হল বিশ্ব ডিম দিবস। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পল্টন মোড় দিয়ে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

‘সুস্থ মেধাবী জাতি চাই, প্রতিদিনই ডিম খাই’ স্লোগান নিয়ে এই শোভাযাত্রা থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে সেদ্ধ ডিম বিতরণ করা হয়। ২৪তম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ উপলক্ষে সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যে কোনো বয়সের মানুষ ডিম খেতে পারেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফ.এ.ও) মতে-সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষের বছরে নূন্যতম ১০৪টি ডিম খাওয়া দরকার। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই সে লক্ষ্য পূরণের খুবই কাছাকাছি ছিল দেশ। ডিমের মাথাপিছু কনজাম্পশন ছিল ১০৩টি। এ বছর সে লক্ষ্য অবধারিতভাবেই পূর্ণ হতে চলেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার পরিমান ১০৫টিতে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান প্রভৃতি দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। একে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বড় একটি সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এ সাফল্যের অন্যতম অংশীদার এদেশের ডিম খামারিরা। তবে পণ্যের দাম না পাওয়ার কারণে অনেক সময়ই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তৃণমূলের খামারিরা। তাই তাঁদের ঝরে পড়া রোধ করতে পোল্ট্রি বীমা চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান জনাব খসরু। শিশুদের পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্কুলের টিফিনে সিদ্ধ ডিম দেয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে ভাবছে সরকার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১০৯৯.৫২ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১৯১.২৪ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪৯৩.১৬ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৫৫১.৬৬ কোটি, এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৭১০.৯৭ কোটি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১৭৮১ কোটি ডিম উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮,৩৩৮.৬৮ কোটি টাকার ডিম কেন্দ্রিক বাণিজ্য হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে এ পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০,৪৫২ কোটি, ১০,৮৬১ কোটি এবং ১১,৯৭৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্রায় ১২,৪৬৭ কোটি কিংবা তারও অধিক টাকার অর্থিক লেনদেন হবে ডিমকে কেন্দ্র করে।

ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে ডিমকে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব রাখেন বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান। তিনি বলেন- পোষাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষের জন্য সপ্তাহে ২টি ডিম নিশ্চিত করতে পারলে তাঁদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং তাঁরা দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারবেন।

শিক্ষিত যুবকদের পোল্ট্রি পেশায় আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মন্ডল। ডিম উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, খামারিদের প্রশিক্ষিত করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।   

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সারা পৃথিবীর মানুষ ফার্মের ডিম খায়। ২০৩০ ও ২০৪১ সাল নাগাদ যে উন্নত দেশের পরিকল্পনা করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তা পূরণ করতে হলে দরকার মেধাবী প্রজন্ম। তাই বেশি বেশি  খেতে হবে। পোল্ট্রি পণ্য রপ্তানীতে সব ধরনের নীতি সহায়তা দিবে সরকার। তিনি বলেন- প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার একটি অনুমোদন করেছে সরকার। রোগ-জীবানুতে খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন ওয়াছি উদ্দিন। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ডিম নিয়ে যে সব অপপ্রচার আছে তা দূর করতে পারলে ডিম খাওয়ার পরিমান আরও বাড়বে। আগামী দিনগুলোতে ডিমের উৎপাদন আরও বাড়বে এবং সেই সাথে অপুষ্টির হার কমবে বলেও মনে করেন ডা. হীরেশ। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পোল্ট্রি সায়েন্সে’র অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ডিমকে বলা হয় পরিপূর্ণ খাদ্য। ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ এমন একটি প্রাকৃতিক আদর্শ খাবার পৃথিবীতে খুব কমই আছে। তাঁরা বলেন- ডিম হার্টের জন্য উপকারি। ইউএসডিএ -এর এক সম্প্রতিক গবেষণা মতে- ১০ বছর আগের ফার্মের ডিমের চেয়ে বর্তমান সময়ের ডিমে প্রায় ১৪% কোলেস্টেরল কম এবং ৩৪% বেশি ভিটামিন রয়েছে। সপ্তাহে ৪টি করে ডিম খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে যায়। সপ্তাহে ৬টি ডিম খেলে স্তন ক্যানসারের সম্ভবনা ৪০% হ্রাস পায়। শর্করা কমিয়ে প্রতিদিন ডিম খেলে, মাসে ৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব! মাত্র ২টি ডিম নারীর দৈনিক প্রোটিন চাহিদার ১/৪ ভাগ পূরণ করতে পারে।