‘২০১১ নম্বর কক্ষে অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছেন অমিত সাহা’

বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা অবশেষে নানা বিতর্ক ও সমালোচনার পর আববার হত্যাকাণ্ড মামলায় গ্রেফতার হলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহার থেকে অমিত সাহার নাম বাদ দেয়ায় ফুঁসে উঠেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

কারণ শেরেবাংলা হলের যে কক্ষে (২০১১ নং কক্ষ) আবরারকে ৬ ঘণ্টাব্যাপী পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষেরই বাসিন্দা অমিত সাহা। অথচ তার নামই নেই মামলার এজহারে!

এর আগে হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। আমরা তার শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরে ঘটনার প্রমাণ পাওয়ায় চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এর পর হয়তো ওরা ফাহাদকে মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত ৩টার দিকে শুনি সে মারা গেছে।’

অর্থাৎ আশিকুল ইসলামের দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অমিত সাহা সরাসরি জড়িত। কিন্তু পরে ছাত্রলীগের তদন্তে তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন বলে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়।

এর পর মামলায় অমিতের নাম না থাকায় এ নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই নানা বিতর্ক, বাদানুবাদ চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বুয়েট ক্যাম্পাসে।

আর এসব বিতর্কের মধ্যেই একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

যেখানে দেখা গেছে, নিহত আবরার ফাহাদের এক সহপাঠীকে ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেছেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে? জানা যায়, আবরার হত্যাকাণ্ডের আগে ১৭তম ব্যাচের (আবরারের সহপাঠী) এক শিক্ষার্থীকে অমিত সাহা ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেন- ‘আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?

এর পর অমিত সাহাকে সমর্থন দিয়ে তার বন্ধুরা প্রথমে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিলেও পরে নতুন স্ক্রিনশটটি আসার পর তারাও সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এক স্ট্যাটাসের শেষে তারা বলেন, কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে আসা তথ্যে (স্ক্রিনশট) আর সবার মতো আমরাও অমিত সাহার সম্পৃক্ততা নিয়ে আর সন্দিহান নই। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই কেসে তার পক্ষে আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করছি।’

এর পর অমিত শাহ ধোয়া তুলসিপাতা নন বলে মন্তব্য করেন তার বন্ধুরা।

তারা ওই স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘আমরা জানি, এ রকম ঘটনায় একদম ধোয়া তুলসিপাতা কেউ হঠাৎ করে জড়ানো সম্ভব নয়। অবশ্যই তার (অমিতের) একাধিক ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে, যা আমরা গুরুত্ব সহকারে কখনও নিইনি বা দেখেও ওভারলুক করেছি। আমাদের এই অসচেতনতার জন্যই আজ এদের মতো অপরাধীর জন্ম।’

অমিত সাহা প্রসঙ্গে এসব বক্তব্য দেন তার ডিপার্টমেন্ট ও সেকশনমেট সুপান্থ জয়, নাশিদ সিফাত, মুবতাসিম ফুয়াদ বেগ ফাহিম, আবির সাহা, তৃপ্ত ভটাচার্য, অনিন্দ্য আকাশ শুভ্র, ইমতিযাজ সৈকত, সামিউল জাওয়াদ রবি।

এর আগেও হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে অমিত সাহা অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছিলেন বলে জানিয়েছে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এমন ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

তবে সেদিন আবরারকে অমিত নিজে পিটিয়েছিল কিনা এ বিষয়ে শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দীসহ বুয়েটের অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীদের ধারণা, অমিত সাহা যদি ঘটনাস্থলে নাও থাকেন তবু তিনি দোষী।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, হত্যার দিন সকালে আবরার ঢাকায় ছিলেন না। কুষ্টিয়ায় মা-বাবার কাছে ছিলেন। আবরার তার রুমে ফিরেছে কিনা তার জানতেন না সিনিয়ররা। আর সে দায়িত্ব দেয়া হয় অমিত শাহকে। আর তিনি আবরার ফাহাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তা হত্যাকারীদের জানিয়েছেন। তবে ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকা একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেছেন, সেদিন অমিত একটু দেরি করে ফোন পেয়েই আসেন। তিনি এসে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন আবরারকে। তার লেখালেখির বিষয়ে অনেক কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি স্টাম্প নিয়ে আবরারকে বেধড়ক পেটান।

আবরার হত্যাকাণ্ডে সেই স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসার পর থেকে অমিত সাহা তার ফেসবুক আইডি ও মোবাইল নম্বর বন্ধ করে রাখেন।

গতকাল বুধবার তার ফেসবুক আইডি সচল করলেও মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।