আবরারের ছোট ভাইকে পুলিশের মারধর

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের ছোটভাই ফায়াজকে মারধর করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বুয়েট ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আবরারদের বাড়ি কুষ্টিয়ায় গেলে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এসময় আবরারের ছোট ভাইসহ আহত হন তিনজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুয়েট ভিসি শুধুমাত্র আবরারের কবর জিয়ারত করতে পেরেছেন। তিনি আবরারের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে বাধা দেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এসময় আবরারের ছোট ভাই ফায়াজ, তার ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী ও আরও একজন নারী আহত হন বলেও তিনি জানান।

জানা যায়, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আবরারের কবর জিয়ারত করে তার শোকাহত আত্মীয় স্বজনকে দেখতে বাড়ি দিকে রওনা দিলে গ্রামবাসী বাঁধা দেন। তাদের দাবি, আবরারের লাশ না দেখে এখন দাফন হওয়ার ২৪ ঘন্টা পর কবর জিয়ারত করতে আসলেন উপাচার্য। এছাড়া আবরারের হত্যাকারীদের বিচারের ক্ষেত্রেও উপাচার্য কোন পদেক্ষেপ নেয়নি। বরং হত্যাকারীদের আড়াল করতে বিভিন্ন নাটক সাজানোর চেষ্টাও হয় বলে জানায় তারা।

মূলত এইজন্য উত্তেজিত গ্রামবাসী উপাচার্যকে আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৫টার সময় আবরারের হত্যার বিচার দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে হাজারো গ্রামবাসী।

এসময় গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ এমনকি বৃদ্ধরাও উপাচার্যের গাড়িবহরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে। এবং বুয়েট ছাত্র আবরারের হত্যার বিচার দাবি করে স্লোগান দেয়। ‘আবরারের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’, ‘বিচার চাই চাই’ স্লোগানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। উত্তেজিত গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে উপাচার্যের সঙ্গে আসা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।

শেষ পর্যন্ত উপাচার্য ও তার সফরসঙ্গীদের আবরারের বাড়িতে যেতে দেয়নি গ্রামবাসীরা। এসময় উপাচার্য পথের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

পুলিশ ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সময় আবরারের ছোটভাইয়ের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থতি আরও উত্তেজনায় রূপ নেয়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, গ্রামবাসীর বাঁধার মুখে আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে কুষ্টিয়া ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়া দেন উপাচার্য।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে কুষ্টিয়া গেছেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে কুমারখালী উপজেলায় রায়ডাঙ্গা গ্রামে যাবেন তিনি।

রায়ডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন ভিসি। আবরারের কবর জিয়ারত করবেন। এ খবরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে রায়ডাঙ্গা গ্রামে। আবরারের বাড়ির পাশে ও কবরের আশেপাশের এলাকায় অসংখ্য র‌্যাব ও পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন।

দেখুন: বুয়েটের ভিসিকে ঘিরে ধরেছে হাজারো গ্রামবাসী (ভিডিও)

গত রোববার রাত আটটায় বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এরপর তাকে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা হলের প্রাধ্যক্ষ জানেন রাত পৌনে তিনটায়। কিন্তু এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্য সেখানে যাননি পরপর প্রায় দুই দিন। এমনকি শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তাঁদের সামনে আসেননি উপাচার্য। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার দিনভর আন্দোলন করার পর তাঁদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সামনে এলে তিনি তোপের মুখে পড়েন।

দেখুন: দেখা না করে কুষ্টিয়া ছাড়লেন বুয়েট ভিসি

এ অবস্থায় রাতে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন উপাচার্য। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আজকে সুনির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, পরবর্তীতে ৩৮ ঘণ্টা পর উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘বিরূপ আচরণ’ করেন এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থানত্যাগ করেন, উপাচার্যকে আজ দুপুর দুইটার মধ্যে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে এর জবাবদিহি করতে হবে।