দেশ নিয়ে ভাবলে তার পুরস্কার এভাবে দিতে হবে?

রুশাদ ফরিদী
রুশাদ ফরিদী

ছাত্র থাকা অবস্থায় থার্ড ইয়ার বা ফোর্থ ইয়ারের ঘটনা। হঠাৎ ক্যাম্পাসে শোনা গেল একজন শিবির পাওয়া গেছে। কলা ভবনের কাছে তাকে বেশ পেটালো তখন ক্যাডার স্থানীয় বিশিষ্ট যুবকেরা। সেই সময় এই নিয়ে আমাদের মধ্যে তেমন কোন ভাবান্তর হয় নাই। ঢাকায় একেবারে না থাকলেও চিটাগাং, রাজশাহীতে শিবিরের রগ কাটা কার্যকলাপ তখন তুঙ্গে। তাই শিবিরের নাম মনের মধ্যে একটা প্রবল ঘৃণার ভাব এনে দিত। তাই শিবির মার ধর খাচ্ছে এটা জেনে খুব একটা খারাপ লাগে নাই।

ঘটনা মনে পড়লো বুয়েটের ছাত্র আবরারের হত্যার ঘটনা শুনে। গায়ের হাত পা হিম শীতল হয়ে যায় ঠান্ডা মাথায় ওকে পিটিয়ে মারার ঘটনা পড়ে। আমি শিবির বা জামাত দু'টো দলেরই ফিলসফি এবং কার্যকলাপ মনে প্রাণে অপছন্দ করি। কিন্তু একই সাথে এটিও বিশ্বাস করি এই দলের সাথে সংশ্লিষ্ট বা এই দলের মতবাদ ধারণ করলেই সে অপরাধী হয়ে যেতে পারে না। অপরাধ তখনই সংঘটিত হয় যখন দেশের কোন প্রচলিত আইন কেউ ভঙ্গ করে।

তো এই আবরার যে শিবির করে এর কি প্রমাণ পাওয়া গেছে সেটা যায় নাই। ধরে নিলাম সে শতকরা একশত ভাগ শিবির। তারপরেও কারো কি অধিকার আছে তাকে মেরে ফেলা তো দূরের কথা তার গায়ে সামান্য আঘাতও করার। আমার ছাত্র অবস্থায় ঐ শিবিরকে পেটানোর ঘটনায় আমার নির্লিপ্ততায় আমি লজ্জা পাই। আমার উচিত ছিল তখন প্রতিবাদ করা সেটা আমি করিনি।

এই ভয়ংকর বর্বরতার কঠোরতম শাস্তি দাবী করছি। আর তার শোক সন্তপ্ত পরিবার কিভাবে সান্ত্বনা পাবে জানি না। আবরারের ফেসবুকের টাইম লাইন দেখে বুঝতে পারি সে দেশ নিয়ে খুব ভাবতো । বিকেলেও তার ফেসবুক একাউন্ট খোলা ছিল, এখন আর পাচ্ছি না। তার শেষ পোস্টটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তির সমালোচনা করে। ফেসবুকে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল, প্রচুর লাইক আর শেয়ার হতো পোস্টগুলো।

ধারণা করা হচ্ছে এই শেষের পোস্টটাই কাল হয়েছে তার। এমনিতেই তো তরুণরা হতাশ, দেখে মনে হয় আধা মৃত। এর মধ্যে থেকে কেউ কেউ যদি দেশ নিয়ে, সমাজ নিয়ে ভাবলে চিন্তা করলে তার পুরষ্কার এইভাবে দিতে হবে?

আর আবরারের পরিবারের প্রতিঃ ক্ষমা করবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার হাতেও আপনার ছেলের রক্ত লেগে আছে। এই অপরাধ আমারও এবং আমি ভীষণ লজ্জিত।