সাক্ষাৎকারে উপাচার্য

সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব পূরণ করবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ

২০১৭ সালে দেশের ৪০তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা শহর হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে এটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হবে। বর্তমানে শাহজাদপুর শহরের তিনটি কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যায়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির বিশ্ববিদ্যালয়টির লিয়াজোঁ অফিসে একান্ত সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইরফান হক-

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপট কী?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: যতটুকু জানি, ১৯৭২ সালে কুষ্টিয়ায় একটি সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন। কিন্তু তার সময় সেটি আর হয়ে ওঠেনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর থেমে গেল সেই প্রক্রিয়া। দীর্ঘকাল পরে ২০১৬ সালে তারই সুযোগ্য কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জাতীয় সংসদে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আইন পাস হয়েছে। তারপর প্রথম উপাচার্য হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেয় সরকার।   

প্রশ্ন: এটি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় হওয়ার কারণ কি?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: এ বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় প্রতিষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে তিনটা অঞ্চল থেকে মানুষের দাবি উঠেছিল। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং নওগাঁর পতিসর। এ তিন জায়গাতেই রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি আছে এবং তার স্মৃতির সঙ্গে এ তিনটি এলাকাই জড়িত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় এটা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আইন সংসদে পাস হয়েছে। এ উপজেলায় রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক জমিদারি ছিল। সেখানকার ১২৭২ একর খাস জমি এখন সরকারের তত্ত্বাবধানে আছে। সেখানেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। 

প্রশ্ন: দেশে সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব পূরণ করবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: আমাদের স্বপ্ন, এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠবে। পৃথিবীর মানুষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে সংস্কৃতি সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য, বাংলাদেশ সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক অবদান সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য। আমাদের একটা ঋদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে, আমাদের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সেটা পৃথিবীর অনেক দেশেরই নেই। আমরা গর্ব করতে পারি, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে। আমাদের ভাষা খুবই সমৃদ্ধশালী একটি ভাষা। এতকাল আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ছিল না বলে ভাষার গুরুত্ব কম ছিল। এখন আমাদের ভাষার গুরুত্ব আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি দেখবেন, ভবিষ্যতে যেসব বিদেশি আমাদের দেশে আসবেন, তারা আগে বাংলা শিখে আসবেন। আমরা যেমন এখন জাপানে গেলে জাপানি এবং কোরিয়ায় গেলে কোরিয়ান ভাষা শিখে যাই, তেমনি বিদেশিরা আমাদের দেশে আসলে বাংলা শিখে আসবেন। আমাদের যে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তা আরও চর্চা করার জন্য এবং সংস্কৃতিকে আরও বিকশিত এবং সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অভাব রয়েছে। সেই অভাবটা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করতে পারবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস। আমাদের মূল লক্ষ্যই থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির ধারণাটিকে পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সংস্কৃতিমনস্ক করে গড়ে তোলা।

প্রশ্ন: স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অগ্রগতি কতদূর?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: প্রাথমিকভাবে ২২৫ একর জমির উপর এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) খুব শিগগিরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে উপস্থাপিত হবে। ডিপিপি পাস হলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব। আমরা প্রত্যাশা করি, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করতে পারব। 

প্রশ্ন: একাডেমিক কার্যক্রমের কী অবস্থা?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ভিসি হিসেবে যোগদান করেছি ২০১৭ সালের ১৫ জুন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু। বর্তমানে দুই ব্যাচের ক্লাস চলছে (২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের)। তৃতীয় ব্যাচের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ৭ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সে-হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় তিন বছর অতিক্রান্ত। দুটো ব্যাচে ক্লাস চলছে এবং তৃতীয় ব্যাচ শিগগির আসবে। 

প্রশ্ন: ভর্তি পরীক্ষা কোথায় এবং কোন প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়ে থাকে? 
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: আমরা স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকায় নিয়ে থাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় এ পরীক্ষা গৃহীত হয়। আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রস্তুত হলে তখন সেখানেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এটি চলবে।

প্রশ্ন: কতটি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: এ মুহূর্তে আমাদের বিভাগ রয়েছে পাঁচটি। বিভাগগুলো হচ্ছে: রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ এবং সংগীত বিভাগ। তবে বর্তমানে চারটি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সংগীত বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। প্রতি বছর প্রতিটি বিভাগে ৩৫জন করে ভর্তি করা হয়। আমরা এর বেশি শিক্ষার্থী নেব না। আমাদের ২৪জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। সবার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই ভালো। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতির আলোকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই নিয়মের মধ্যে থাকতে চাই। 

প্রশ্ন: বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সেটির কী অবস্থা?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঁচটি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। শাহজাদপুর শহরের তিনটি কলেজের তিনটি স্বতন্ত্র ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে আমরা সেখানে ক্লাস এবং একাডেমিক কাজ পরিচালনা করছি। আমরা তাদের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ। এসব কলেজের নিজেদের প্রয়োজন ও চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে ভবনে জায়গা করে দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। 

প্রশ্ন: এই দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কেমন দেখছেন?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ : নানান দিক থেকে আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো পড়াশোনা করছে, নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে এবং শিক্ষকদের পাঠদানে কোনো প্রশ্ন নেই। তাছাড়া আমাদের পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় আর সেশনজটের প্রশ্নই আসে না। আমরা নানান রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। এছাড়া আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালনায় রায়গঞ্জ অঞ্চলে সপ্তম শতাব্দীর একটি বৌদ্ধ বিহার নিয়ে গবেষণা চলছে। এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা চলছে।

প্রশ্ন: সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে এটি গড়ে তোলা হবে কিনা?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: জাতীয় সংসদে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন পাস হয়েছে, সেখানে পরিষ্কার করে বলা নেই যে, এটি একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলে দিচ্ছে এটার মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা আছে। তবে বাস্তব কারণে বোধ করি কেবলই সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নয়, সকল বিষয় পড়ানো হবে। আইনেও সেটি বলা আছে। কিন্তু সন্দেহ নেই, আমরা সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেদিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করব। 

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন জায়গাতে দেখতে চান?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: আগামী ২০ বছরের মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়াবে। আমার স্বপ্ন পৃথিবীর মানুষ আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার জন্য আসবে। এজন্য আমাদের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আমরা রাজি আছি।

প্রশ্ন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে যে অভিন্ন নীতিমালা করার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন শিক্ষকরা। বিষয়টি নিয়ে আপনার মত কি?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের একটি নীতিমালা করার কথা ভাবছে সরকার। এটা নিয়ে একটা কমিটিও করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার বসেছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। ন্যূনতম যোগ্যতা-সংবলিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। আমার মতে, ন্যূনতম মানকে রেখে বিসিএস পরীক্ষার আদলে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায় তাদের জন্য একটি পরীক্ষা চালু করা হোক। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ সরকারি কম কমিশনের তত্ত্বাবধানে হতে পারে। এ পরীক্ষায় যারা পাস করবে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নেওয়া হলে নানামাত্রিক সমস্যা দূর হবে।

প্রশ্ন: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণার আগ্রহ কম কেন?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণা করার আগ্রহের অভাব রয়েছে বলে মনে করি। গবেষণা করার সদিচ্ছা থাকলে আমার মনে হয় আর্থিক সচ্ছলতার অভাব থাকবে না। বিভিন্নভাবে ফান্ড পাওয়া যায়। গবেষণা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন টাকা দিচ্ছে। তবে আগে শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণা করার আগ্রহটা তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্তির পর আর কিছু লেখেন না। অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষক কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে তারা আর কিছু লিখতে চান না। অথচ ওই সময়টা তার আসল গবেষণা করার সময়।

প্রশ্ন: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার পরিবেশ কেমন থাকবে?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণাকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার বিশেষ নজর থাকবে। ভবিষ্যতে যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবেন, তারাও বিষয়টির দিকে নজর দেবেন বলে আমি আশা করি। আমরা আশা করছি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে যথার্থ গবেষণার পরিবেশ তৈরি করতে পারব। এজন্য আমরা ডিপিপিতে বলে দিয়েছি যে, অবকাঠামোতে সেন্ট্রাল সাপোর্ট সিস্টেম বলে একটা ১০তলা ভবন তৈরি করা হবে। সেখানে গবেষণার একটি সুন্দর পরিবেশ থাকবে। গবেষকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

প্রশ্ন: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষাব্যবস্থা। এ শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ হওয়ার চেয়ে আমরা চাকরিজীবী তৈরি করি। আমরা মানুষ তৈরি করি না, আমরা চাকরিজীবী তৈরি করি। এ কারণে দেশে শিক্ষার্থী নাই, সবাই পরীক্ষার্থী। এটি একটি সংকটের জায়গা। তাছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের বলে ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে। উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা এমন একটা প্রজাতি তৈরি করতে চায়, যারা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে যারা পাস করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এমনকি বলতেও লজ্জা লাগে, তারা মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এমন শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনও পর্যন্ত আছি আমরা। নানান রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল যে ভালো হয়েছে, তা বলা যাবে না। একসময় আমরা একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। এখন সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে, এটা যে কি জিনিস, আমি নিজেও বুঝতে পারি না। এটা শিক্ষার্থীরা বুঝে না আর শিক্ষকরা বুঝে কি না তা আমার সন্দেহ। কিন্তু এটা চলছে। আমার কথা হলো-আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। শিক্ষিত হওয়ার অর্থ হলো ভালো মানুষ হওয়া। এখন শিক্ষার দাবি সৃজনশীলতা। আামদের সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ফলে শিক্ষার উন্নয়নে বহুবিধ সুফল পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রতিবেদক: আপনাকে ধন্যবাদ। 
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ: আপনাকেও ধন্যবাদ।