‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও ভিক্ষা করেছি’

ভিক্ষা করলাম আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে ভিক্ষা করছি, ভেবে হয়ত অবাক হতে পারেন। তবে ভিক্ষা করার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। ১৬-১৭ বছর আগে যখন প্রথম ইউরোপে আসি, তখন থেকেই এই ইচ্ছে। এইসব দেশে রাস্তা গুলোতে দেখতাম মানুষজন ভায়োলিন, গীটার কিংবা এইসব বাজিয়ে ভিক্ষা করছে। তখন থেকেই মনে হতো- এইসব দেশে ভিক্ষা করতে হলেও তো কিছু জানতে হয়।

আর আমরা? সেই থেকেই ইচ্ছে। নানান সঙ্কোচের কারনে নিজ শহরে ভিক্ষা করা হয়ে উঠেনি। ছোট্ট শহর। বাইরে বের হলেই নানান দেশ থেকে আসা ছাত্রদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। শিক্ষক ভিক্ষা করছে, এই দৃশ্য দেখে ছাত্ররা না শেষমেশ কি ভেবে বসে; এই সঙ্কোচ ছিল। আজ শনিবার। ছুটির দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো- মন খারাপ! এরপর ভাবলাম কি করা যায়। মনে হলো- যাই, বের হয়ে ভিক্ষা করে আসি! এতে যদি মন ভালো হয়। শেষমেশ সঙ্কোচ গুলোকে পেছনে ফেলে ভিক্ষা করেই ফেললাম।

ভালোই ঠাণ্ডা পড়ে গিয়েছে আমাদের শহরে। সকালের দিকে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রীর মতো ছিল। গীটার বাজাতেই পারছিলাম না। এরপরও প্রায় দুই ঘণ্টার মতো ভিক্ষা করেছি। এতো চমৎকার অভিজ্ঞতা নিকট অতীতে আমার আর হয়েছে কিনা জানি না। পুরো অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে এক সময় আস্ত একটা লেখা লিখে ফেলা যাবে। তবে একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। আপনি যদি রাস্তায় কারো সঙ্গে পরিচিত হন এবং আপনার পরিচয় দেন- আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা এই টাইপ কোন পেশার মানুষ আপনি। লোকজন আপনার সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলবে এবং মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন; ওই মানুষটা আপনার বন্ধু হয়ত হবে না।

আজ আমি মাত্র দুই ঘণ্টা ভিক্ষা করেছি, এই ভিডিওতে যেই রাস্তার মোড়ে বসে আমি ভিক্ষা করেছি; সেখানে কিন্তু আমি আমার পরিচয় ভিক্ষুক হিসেবেই দিয়েছি। বিদেশি একটা ছেলে রাস্তার মোড়ে গীটার বাজিয়ে, তাও আবার বাংলা গান গেয়ে ভিক্ষা করছে; লোকজনের অবাক হওয়ার কথা; অথচ এই দুই ঘণ্টায় আমার তিনজন ভালো বন্ধু জুটে গিয়েছে। কারন ওদের কাছে আমি ভিক্ষুক। ওরা আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মিউজিক নিয়ে নানান আলোচনা। সপ্তাহান্ত গুলোতে এক সঙ্গে কিছু করা যায় কিনা ইত্যাদি। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছি। ওরা মোটামুটি সব কিছুই আমার সঙ্গে শেয়ার করছিল!

বাসায় ফিরছি এই মুহূর্তে। হঠাৎ মনে হলো- আমার তো মন ভালো হয়ে গিয়েছে। এই জন্যই সব সময় মনে হয়- ছোট খাটো ইচ্ছে গুলো পূরণ করে ফেলাই ভালো। ভিডিওতে দেখবেন পয়সা পড়ে আছে। দুই ঘণ্টায় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট ইউরো (৮০০ টাকার মতো) হয়েছে। ভাবছি পয়সা গুলোকে বাদ বাকী জীবন রেখে দিব কিনা। নাকি ভালো লাগার মানুষজনকে নিয়ে ডিনার করতে যাবো! তবে আমি মোটামুটি নিশ্চিত ভবিষ্যতে আবারও আমি ভিক্ষে করতে বের হবো। ও আচ্ছা, ভিডিওতে জীবনের পরাজয়ের গান গাইতে দেখে আবার ভেবে বসবেন না- আমি পরাজিত মানুষ! আমার জীবন খাতায় পরাজয় বলে কোন শব্দ নেই! (সংগৃহিত)