মুখস্থ বিদ্যা নয়, মূল বই বুঝে পড়লে চান্স পাওয়া সহজ

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ শিক্ষার্থীদের কাছে একটি সংগ্রামের নাম। এ যুদ্ধে কেউবা হার মানেন আবার কেউ লড়ে যান শেষ পর্যন্ত। সফলতাকে স্পর্শ করেই তবে হাল ছাড়েন বিজয়ীরা। তেমনি এক সফল ভর্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুর রহমান একান্ত। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়ার দিনমজুর পিতা মো. ইয়াকুব আলী ও গৃহিণী মাতা আজুফা বেগমের ছোট সন্তান। নিজ গ্রামের সেন্ট লুইস হাই স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং সদর উপজেলার নতুনহাট পাবলিক কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে সফলতার সাথে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন লালন করলেও বর্তমানে পড়ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(যবিপ্রবি) জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ফার্মেসি বিভাগে। এইচএসসি শেষে তাঁর কলেজের গণিত শিক্ষক মো. আনিসুর রহমানের সহযোগিতায় ভর্তি হন যশোর শহরের একটি কোচিং সেন্টারে এবং ওই সময় স্যারের বাসায় থেকে কোচিং করেন। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবিতে ৪৩৪১ সিরিয়াল আর মেডিকেলে ৬২৪২ সিরিয়াল আসলে কিছুটা ভেঙে পড়েন। অর্থাভাবে অন্য জায়গায় ভর্তি ফরম তুলতে পারছিলেন না। পরে এক বান্ধবীর কাছ থেকে টাকা ধার করে যবিপ্রবির এ ও বি ইউনিটে ভর্তি ফরম কিনেন তিনি। মেধাতালিকায় এ ইউনিটে ৪১ তম হলেও বি ইউনিটে লাভ করেন প্রথম স্থান।

বর্তমানে কয়েকটা টিউশনি আর শহরের একটি স্পেশাল ব্যাচে বায়োলজি ক্লাস নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি গতবারের (২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের) ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ১২ হাজার পরীক্ষার্থীর ভিতরে বি ইউনিটে ১ম হওয়ার পাশাপাশি সব ইউনিটের প্রায় ৪২ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৩.০৯ স্কোর নিয়ে সম্মিলিতভাবে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।

আগামী ২১ ও ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা বিভাগের চতু্র্থ সরকারি এবং জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে চলা দেশের স্বনামধন্য এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় ছয়টি ইউনিটে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৬টি বিভাগে মোট নয়শ দশ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।

২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে এবং নিজের ভর্তিযুদ্ধ জয়ের গল্প তুলে ধরতে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। জানান ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা ও বি ইউনিট বিষয়ক নানা তথ্য। এবছর বি ইউনিটের অধীনে ছয়টি বিভাগ মিলে মোট ১৯০টি আসন সংখ্যা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কোচিংয়ের বিষয়ে একান্ত বলেন, কোচিংয়ে পড়াটা আসল নয় তারা শুধু দিকনির্দেশনা দেয়। সেটি অনুযায়ী পড়ালেখা করে আমি সফলতা পেয়েছি। পড়াশোনাটা সম্পূর্ণ নিজের কাছে। এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, দশ ঘন্টা কিংবা ষোলো ঘন্টা পড়া মূল বিষয় নয়, বুঝে না পড়লে সফলতা আসবে না। অনেকে মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী কিন্তু বুঝে না পড়লে সেটা কাজে দিবে না। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় রুটিন মাফিক দৈনন্দিন পড়াশোনা করতে হবে এবং কমপক্ষে আট থেকে থেকে নয় ঘন্টা পড়তে হবে।

দরকার ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া কখনোই ব্যবহার করা যাবে না। আর উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষ থেকে দিনের পড়া পড়া দিনে শেষ করতে পারলে, মূলবই ভালভাবে শেষ করে আয়ত্ত করতে পারলে সে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ভালো কিছু আশা করত পারে। মেডিকেল প্রিপারেশন যাদের আছে তাদের জন্য বি ইউনিটে চান্স পাওয়া সহজ। বি ইউনিটে জীববিদ্যায় ২৫, রসায়নে ২৫, পদার্থ বিজ্ঞানে ২০ এবং ইংরেজিতে ১০ নম্বরসহ মোট ৮০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপর বাকি ২০ নম্বর যোগ করে সর্বমোট ১০০ নম্বরের মধ্যে মেধাতালিকা করা হয় প্রশ্নব্যাংক কিনলে কোনো নির্দিষ্ট ইউনিটের প্রশ্নপত্রের ব্যাপারে ধারনা পাওয়া যায়।

প্রশ্নব্যাংক সমাধানের সাথে সাথে মূলবই বুঝে পড়লে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা যায়। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে একান্ত বলেন,পরিবারের সহযোগিতা অনেক বড় জিনিস। সাহস জুগিয়ে পরিবার শিক্ষার্থীর পাশে থাকলে সে অনেক দূরে যেতে পারে এবং এক্ষেত্রে পরিবারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকাটা খুব জরুরী।

ভবিষ্যতে ফার্মাসিস্ট হওয়ার চিন্তা আছে একান্তর। উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরের দেশ থেকে পিএইচডি করে ভালো মানের গবেষক হতে চান তিনি। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সাহায্য করা এবং গ্রামের অবহেলিত মানুষদের শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আশাবাদী। এজন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি।