চিরকুটে ভর্তি: ঢাবি ভিসির পদত্যাগ চায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং ডাকসুর নেতা নির্বাচিত হওয়ায় বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ ডাকসু নির্বাচনে চিরকুটের মাধ্যমে নেতা বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়াকে অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্থ করার অভিযোগে উপাচার্য ও ব্যবসায় অনুষদের ডিনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে টিএসসি মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন তিনটি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো- যারা অবৈধভাবে ভর্তি হয়েছেন তাদের ছাত্রত্ব ও ডাকসুর পদ বাতিল করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে খালি পদগুলোতে দ্রুত উপনির্বাচন দেওয়া। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো. আখতারুজ্জামানের পদত্যাগ করা।

রোববার একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের আট নেতার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তারা সবাই ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ায় নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তারা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হন।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন চিরকুটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিরোধী কাজ ও নৈতিকতার স্খলন। তাই তাদের উচিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা। এছাড়া ডাকসুর পদগুলো থেকে ছাত্রলীগের আটজন নেতাকে বহিষ্কার করে তাদের শূন্য পদগুলোতে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’

ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্লজ্জ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একটা গৌরবোজ্জ্বল পরিচয় ছিল তার পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে। আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে রোকেয়া হলের নিশিরাতের অবৈধ নির্বাচিত নেত্রীরা কিভাবে অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল অনিয়মের মূলহোতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। উনার সম্পর্কে নতুন কিছু বলার আমার আগ্রহ নেই। কারণ উনার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে যে পরিমাণ সংবাদ প্রচারিত হয় তা থেকে আপনারা উনার সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি আজকের মানববন্ধন থেকে অনতিবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা জেনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু কারচুপির মধ্য দিয়ে ডাকসু নির্বাচন দিয়ে ছাত্রলীগকে জিতিয়ে দিয়ছিল। কিন্তু আজ আমরা জানলাম শুধু কারচুপি নয়, তারা কারচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্রত্ব দিয়ে তাদের ডাকসুতে স্থান দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যকার সম্পর্ককে ভূলুণ্ঠিত করেছেন। এর মাধ্যমে তাদের নৈতিক স্খলন ঘটেছে। তাই অবিলম্বে পুনরায় ডাকসু নির্বাচন দেওয়া এবং উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ডিন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকের পদত্যাগের দাবি জানান তিনি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, এ বছর ১১মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম এ নির্বাচন একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু নানা বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আমরা ডাকসুর উপর আস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু আজ ছয় মাস পরে আমরা যখন দেখি ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ। শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খার একটিও অংশও তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এর কারণ আজ আমাদের মধ্যে স্পষ্ট। তারা কাজ করবে কিভাবে তারা শিক্ষার্থীর অধিকার নিয়ে ডাকসুতে আসেনি।

তিনি আরো বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যারা নির্বাচন করেছিল তারা অবৈধভাবে নির্বাচন করেছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। তারা প্রশাসনের সহায়তায় অবৈধভাবে নির্বাচন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বিজনেস অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতের সহায়তায় তারা প্রার্থী হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজে একজন অছাত্র তিনি অছাত্র হয়ে ডাকসুতে অছাত্র নিয়ে এসেছেন। আমরা এর বিচার চাই। আমরা ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি।

ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো কোনো অন্যায়ের সাথে মাথা নত করে না। কিন্তু ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাত্রে তিনটায় ডাকসুর ফলাফল ঘোষণা করেছে।এ নির্বাচনে প্রহসন চালিয়ে কিভাবে অন্যায় করেছে কিভাবে প্রহসনের নির্বাচন চালিয়েছে কিভাবে ডাকসুতে কলঙ্কিত করা হয়েছে আপনারা জানেন। এত অন্যায় হওয়ার পরও আমরা বারবার ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ করেছি। এতো প্রতিবাদ করার পরও যাদেরকে ডাকসুতে প্রতিনিধি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে ভর্তি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি এবং বিজনেস অনুষদের ডিন একটা চিরকুটের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনে জয় করতে সাহায্য করেছে। আমাদের মাথায় আসেনা তারা শিক্ষক হয়ে কেমনে এটা করল।আমরা মনে করি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দালাল ভিসি এবং বিজনেস অনুষদের ডিন তাদের নির্বাচিত করতে সাহায্য করেছে। এজন্য ভিসি নিজে দায়ি। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। যদি সে পদত্যাগ না করে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে না।

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল ওই কোর্সে ভর্তি হওয়া গেলেও তাদের কেউই তাতে অংশ নেননি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোসণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হন।

তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য পদে মোট আটজন নির্বাচনে অংশ নেন, বিজয়ী হন সাতজন। হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এরমধ্যে একজন নির্বাচিত হন এবং অন্যজন পরাজিত হন। অপরজন, ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য