অর্জন আছে, তবে প্রত্যাশার ধারেকাছেও যেতে পারিনি

আখতার হোসেন

আখতার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’র (ডাকসু) সমাজেসবা সম্পাদক। সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস তার মুখোমুখি হয়েছে। এ সময় আখতার হোসেন ডাকসু নিয়ে নানা অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, খুব ছোট পরিসরে থেকেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে পেরেছি; এটা ভালো লাগার বিষয়। তবে বৃহত্তর অর্থে যদি বলি, তবে কিছু অপ্রাপ্তি রয়েছে। যা আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা ছিল, নানা বাঁধার কারণে তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক- মোতাহার হোসেন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কেমন আছেন
আখতার হোসেন : জ্বি ভালো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস : ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে অর্জন কী?
আখতার হোসেন: ব্যক্তির জায়গা থেকে বলি তবে কিছু প্রাপ্তির বিষয় আছে। খুব ছোট পরিসরের থেকেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে পেরেছি। কিছু সমস্যার সমাধান আমি করতে পেরেছি। যদিও সেখানে ব্যক্তি পরিচয়ের চেয়ে সমাজসেবা সম্পাদকের পরিচয়টাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তবে যদি বৃহত্তর অর্থে বলি, তবে অপ্রাপ্তি রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকসুকেন্দ্রিক যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। মূলত ডাকসুতে দুটি ভিন্ন প্যানেল থাকার কারণে এখানে একটি সংকট তৈরি হয়েছে। সেই জায়গাটা খারাপ লাগার বিষয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডাকসু নির্বাচনে আপনার ইশতেহার কী ছিল?
আখতার হোসেন: প্যানেলের ইশতেহারই আমার ইশতেহার। তার ওপরেই আমরা কথা বলেছি। তবে দুটি জিনিসে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এক. বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির বিষয়ে সোচ্চার থাকব। দুই. বিশ্ববিদ্যালয় যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে; সে বিষয়টি খেয়াল রাখব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্যানেলের ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে?
আখতার হোসেন: খুব অল্পই বাস্তবায়িত হয়েছে। ইশতেহারের মূল জায়গাটা ছিল গেস্টরুম-গণরুম বন্ধ, প্রশাসনের মাধ্যমে হলের সিট বন্টন এবং শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার। প্রকৃত অর্থে এর কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে ইশতেহার অপূর্ণই থেকে গেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইশতেহারে ‌‌‘লিবারেশন ওয়ার স্টাডি সেন্টার’ এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ক্যান্টিন স্থাপনের কথা বলেছিলেন। সেগুলোর কী খবর?
আখতার হোসেন: আমরা লিবারেশন স্টাডি সেন্টার করতে পারেনি। ডাকসুর ভিপি এবং আমি বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিটি জায়গায় আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছি। ডাকসু ভিপি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থা ক্যান্টিন নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেটা হবে- এমন একটা অবস্থায় আছে; তবে হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গেস্টরুম-গণরুম বন্ধ ও জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেয়া বন্ধের জন্য দৃশ্যমান কী কী করেছেন?
আখতার হোসেন: আমরা জোরালো কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। হলগুলোতে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে যে ট্রেডিশন চলে আসছে, সেটি মুক্তির জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আমরা এসএম হল থেকে কার্যক্রম শুরু করি; কিন্তু সেখানে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভিসিসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা আছেন; তাদের কাছে বারবার গিয়েছি। কিন্তু তারাও সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেননি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ‘নিরাপদ খাদ্য সেল’ তৈরির কথা ছিল। অগ্রগতি কী?
আখতার হোসেন: নিরাপদ খাদ্য সেল তৈরি হয়নি। তবে খাদ্যের মান উন্নয়নে ভিপি এবং আমি কাজ করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরিবহন সমস্যার সমাধান ও ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি তৈরি করবেন বলেছিলেন। এ বিষয়ে কী প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছেন?
আখতার হোসেন: পরিবহন খাতের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি এখনো তৈরি হয়নি। ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি তৈরির জন্য প্রশাসনের সাথে বারবার কথা বলেছি। যখনই আমরা ভিসি স্যারের সাথে দেখা করেছি, তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু কার্যত প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রেজিস্ট্রার ভবনে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হয়- এমন অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ভবনটিকে ডিজিটালাইজেশনের ব্যাপারে আপনাদের কাজের অগ্রগতি কতদূর?
আখতার হোসেন: ডাটাবেজ তৈরির বিষয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের কনসার্নে থাকার মতো একটি বিষয়। বিষয়টি তাকে অবহিত করেছি। তিনি বলেছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ কারণে সময় লাগছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার মান উন্নয়নে যেন বাজেটের ২০ শতাংশ গবেষণায় বরাদ্দ হয় এ ব্যাপারে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি ইশতেহারে ছিল।
আখতার হোসেন: এ ব্যাপারে কাজ করছি। বিষয়গুলো মৌখিকভাবে বারবার প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তবে লিখিতভাবে কিছু দেওয়া হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রশ্ন ফাঁস এবং ভর্তি জালিয়াতির ব্যাপারে এ বছর আপনারা কী কী করেছেন?
আখতার হোসেন: আমাদের চেষ্টায় কিছু শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখনই ভর্তি জালিয়াতির ব্যাপারে মাঠে নেমেছেন, তখনই তাদের একজন হয়ে সঙ্গে থেকেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাত কলেজের বিষয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কি?
আখতার হোসেন: সাত কলেজের ব্যাপারে কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা কখনোই অধিভুক্তি চায়নি। এ বিষয়ে আমরা বারবার কথা বলেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের ইশতেহার বাস্তবায়ন বা কাজ করার জন্য কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা?
আখতার হোসেন: আমি এবং ডাকসুর ভিপি ভিন্ন একটি প্যানেল থেকে এসেছি। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগ থেকে যারা এসেছে; তারা বারবারই আমাদেরকে সংকুচিত করে রাখার চেষ্টা করেছে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যে, সাইবার সেফটির জন্য আমি যে প্রোগ্রামটি আয়োজন করেছিলাম প্রোগ্রামটি শেষ পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। মূলত ছাত্রলীগের কারণেই প্রোগ্রামটি করা যায়নি। তারা চায়নি, আমি হলে প্রোগ্রাম করি। আমাকে ফেইলর (ব্যর্থ) হিসেবে উপস্থাপনই তাদের চেষ্টা ছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ পর্যন্ত আপনার অর্জন কি?
আখতার হোসেন: যদি অর্জনের কথা বলি তাহলে বলব, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কিছুই করতে পেরেছি । সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথাগুলো আমি আমার মুখ দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। এই জায়গা থেকে কিছু মানুষের উপকার করতে পেরেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কাজ করতে গিয়ে ভিপি-জিএসের সহায়তা পেয়েছেন কিনা?
আখতার হোসেন: ভিপি যেহেতু আমার প্যানেলের সেহেতু আমি তার সবসময়ই সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি। তবে জিএসকে সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। আমার বড় এক্সপেরিয়েন্সের জায়গাটা ছিল সাইবার সেফটির প্রোগ্রামকে নিয়ে কিন্তু সে প্রোগ্রামটি করতে দেয়া হয়নি। এখানে আমি জিএসএর সহযোগিতা পাইনি। জিএস এবং এজিএসের অসহযোগিতার কারণে মূলত আমি প্রোগ্রামটি করতে পারিনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রোগ্রাম আয়োজন করতে গিয়ে বাজেট পেতে কোন সমস্যায় পড়েছেন?
আখতার হোসেন: এখন পর্যন্ত একটি প্রোগ্রামই করেছি, সেটির জন্য বাজেট চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটিতে কোনো বাঁধা পাইনি। জানিনা ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হয় কিনা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ, সময় দেওয়ার জন্য।
আক্তার হোসেন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ধন্যবাদ।