আমার বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা

৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ৮ম স্থান অধিকার করেছিলেন দিদার নূর। তিনি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। বিসিএস পরীক্ষায় পছন্দক্রম ছিল- পুলিশ, প্রশাসন, অডিট। আর ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শাহ আব্দুল লতিফ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে তুলে ধরেন তার ভাইভা অভিজ্ঞতা। 

বেল চাপতেই অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকে সালাম দিলাম। স্যার মাথা নেড়ে সালামের উত্তর দিলেন।ইতোমধ্যে চেয়ারের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু স্যার আমাকে বসতে বলছেন না। আমি কি বসতে পারি স্যার এটা বলার কেন জানি সাহস হচ্ছিলো না। অতঃপর স্যার ইশারা দিয়ে বসতে বলার অনুমতি দিলে বসতে যাচ্ছি ঠিক এমন সময় জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা বলতো দুইয়ে দুইয়ে চার হয় দুইয়ে দুইয়ে আর কত হয়?

আমি: কিছুক্ষন ভেবে বললাম বাইশ হয় স্যার। স্যার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ঠিক আছে।

চেয়ারম্যান স্যার: বায়োটেকনোলজিতে পড়েছো ডিএনএ, আরএনএ এর রাসায়নিক গঠন বলো। ডিএনএ টেস্ট কেন করে? কিভাবে করে?
আমি: উত্তর দিলাম।
চেয়ারম্যান স্যার: ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি বলবো- আমি বাঙ্গালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। কে বলেছিলেন?
আমি: শেখ মুজিব।
চেয়ারম্যান স্যার: শেখ মুজিবের বাবা পেশায় কি ছিলেন?
আমি: সেরেস্তাদার।

পরীক্ষক-১: আসামীকে ফাঁসি দেওয়ার সময় বিসিএস কর্মকর্তা কারা কারা উপস্থিত থাকেন?
আমি: এসপি, ডিসি, সিভিল সার্জন।
পরীক্ষক-১: পুলিশ কোন কোন আইনে চলে?
আমি: উত্তর দিলাম।
পরীক্ষক-১: সিআরপিসি কে ড্রাফট করেন?
আমি: লর্ড ম্যাকলে।

পরীক্ষক-২: নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না। কে বলেছেন?
আমি: হেলাল হাফিজ।
পরীক্ষক-২: পুলিশ তো অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশা। গুলি করতে পারবে মানুষের বুকে!
আমি: পারবো স্যার। দেশ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমি আমার প্রাণ উৎসর্গ করতে রাজী আছি।

পরীক্ষক-২: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার কি যোগ্যতা আছে তোমার? আমরা তোমাকে কেন নিবো?
আমি: স্যার বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত যোগ্যতা পূরণ করে প্রিলি, লিখিত পাস করে ভাইবার জন্য আমি আপনার সামনে। আর আমি মনে করি, আমার মেধা ও মনন এখনও কাদামাটির মতই কোমল, আপনারা যেভাবে চাইবেন ঠিক সেভাবেই আমাকে দেশের জন্য গড়ে তুলতে পারবেন। আর আমি মনে করি, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য এটাই আমার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা।

উত্তর শুনে তিনজনই আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। অতঃপর চেয়ারম্যান স্যার জিজ্ঞেস করলেন।

চেয়ারম্যান স্যার: আইজিপি কোন স্কেলে বেতন পান।
আমি: ভুলে প্রথম গ্রেড বলে ফেলি। আসলে উনি সুপিরিয়র স্কেলে বেতন পান।

চেয়ারম্যান স্যার: তুমি কি ক্রসফায়ার সমর্থন করো?
আমি: ক্রসফায়ারে অনেকসময় ধরাছোয়ার বাইরে থাকা দুর্ধর্ষ অপরাধীরা মারা যায়। যা সমাজের অধিকাংশ শান্তিপ্রিয় মানুষেরর মত আমিও সমর্থন করি কিন্তু এতে নিরীহ, সাধারণ মানুষ মারা পড়লে তা কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।

সবশেষে চেয়ারম্যান স্যার আমার কাগজপত্র আমার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন তুমি এখন যেতে পারো।

এই ছিল আমার ৩৭তম বিসিএস ও সর্বশেষ চাকরির ভাইভা।বিসিএস সহ বেশ কয়েকটি ভাইভা দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভাইভা বোর্ডকে আত্মবিশ্বাসের সাথে স্মার্টলি ফেস করতে পারলে বোর্ড আপনাকে কখনই নিরাশ করবে না। তাই ভাইবার আগে যতবেশি পারুন তথ্য সংগ্রহ করুন, অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এতে একদিকে যেমন আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে অন্যদিকে সাফল্যের হারও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। সবার জন্য শুভকামনা।

লেখক: দিদার নূর
সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি)
৩৭তম বিসিএস (মেধাক্রম-৮)