সরকারি ও এমপিও শিক্ষকরা কোচিংয়ে যুক্ত হলেই ব্যবস্থা

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার নীতিমালা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। ২০১২ সালে ওই নীতিমালাটি প্রণীত হলেও আইনি জটিলতায় এতদিন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।তবে সেই জটিলতা কেটে যাওয়ার পর এখন সরকার নীতিমালাটি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘নীতিমালাটির বিরুদ্ধে কয়েকজন রিট করায় এতদিন আমরা আইনটির বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন সেই বাধা কেটে যাওয়ায় আমরা সেটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছি।'’

নীতিমালাটি সাত বছরের পুরনো বলে সেটি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলো নজরদারির কার্যক্রমও শুরু হবে।

উপমন্ত্রী বলেন, ‘২০১২ সালে ওই নীতিমালাটি করা হয়। এখন আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় সেটি কঠোরভাবে কার্যকরে যাচ্ছি। কিন্তু এই সাত বছরে কোচিং সেন্টারগুলোর অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই আমরা সেই নীতিমালাটি আরেকটু পর্যালোচনা করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘কোচিং সেন্টারগুলোয় যাতে একটা শৃঙ্খলা আসে এবং সেটি শুধুমাত্র কোচিং হিসাবেই, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্যই ব্যবহৃত হয়, বাণিজ্য হিসাবে ব্যবহৃত না হয়, সেই ধরণের একটা চেষ্টা আমরা অনেকদিন ধরেই করে আসছিলাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘একই সময় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা অনেক সময় সেখানে উপকৃত হয়, আবার অনেক সময় অভিযোগ আসে যে, এই সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হয়, প্রশ্ন ফাঁস হয় ইত্যাদি অভিযোগ পেয়ে এসেছি। এ কারণেই আমরা চেয়েছি যে এখানে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন মামলা চলার কারণে সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। যেহেতু আইনি বাধা এখন আর নেই, তাই আমরা সেই নীতিমালাটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। কিন্তু যেহেতু সেটি সাতবছরের পুরনো, তাই বর্তমান বাস্তবতার আলোকে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় যোগ করতে হবে।’

এই লক্ষ্যে আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ড, ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে কোচিং সেন্টারগুলোর মনিটরিং ও নীতিমালাটি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। নীতিমালায় বাস্তবায়ন মনিটরিংয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে একটি, জেলা পর্যায়ে একটি ও উপজেলা পর্যায়ে একটি মোট তিনটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী কেন কোচিং সেন্টারে যান, সেটাও আমাদের দেখতে হবে। স্কুল কলেজের শিক্ষায় কোন ঘাটতি আছে কিনা, পাঠ্যপুস্তকে সমস্যা আছে কিনা, কেন গাইড বইয়ে শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয়, ইত্যাদি বিষয়গুলোও আমরা দেখবো।’

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি। সাড়ে ছয় বছর পর গত ২৪ জানুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

নীতিমালায় সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না বলা রয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ ১০জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন।

তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারবেন না। সরকারি বা এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য অবৈধ বলে গত সাতই ফেব্রুয়ারি রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২কে বৈধ বলে রায় এসেছে। এই নীতিমালার বাইরে গিয়ে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কেউ শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবেন না। বিবিসি বাংলা।