সেই ডিসি ওএসডি, নতুন দায়িত্বে এনামুল হক

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিসিকে ওএসডি করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

জামালপুরে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন দায়িত্বে এসেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কে. এম. আল-আমীন।

এছাড়া জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

এর আগে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলে, তাকে ওএসসি করে আজই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, ওই ডিসি আহমেদ কবিরকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হবে।

প্রজ্ঞাপন
প্রজ্ঞাপন

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এনেছি। রোববার (আজ) তাকে ওএসডি করে আদেশ জারি করা হবে। সেখানে (জামালপুর) নতুন একজন যোগ দেবেন।’

পড়ুন:অন্তরঙ্গে জড়ানো সেই নারীও শাস্তি পাচ্ছেন

বিতর্কিত ওই ভিডিওতে নিজ অফিস কক্ষে ডিসি অফিসের এক নারী কর্মচারীর সাথে এমন ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। গোপন কক্ষের বিষয়ে ডিসি জানিয়েছেন, ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি অফিসের বিশ্রাম নেয়ার কক্ষ এবং ভিডিওর ওই নারী তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি।’ বিষয়টি নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজ-কাল তো এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে বানানো যায়, তাই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি খোঁজ নিতে গোপনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

ভিডিওটিতে ডিসি আহমেদ কবীরের সঙ্গে তার অফিসের এক নারীকর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।

যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে ঘটনাটি ‘সাজানো’ বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। ওই ঘটনায় জামালপুরসহ সারাদেশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘চাকরির বিধি অনুযায়ী অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার (ডিসি আহমেদ কবীর) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জামালপুরে যোগদান করেন ২০১৭ সালের ২৭ মে। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি তার অফিসের কক্ষের পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ধূমপান ও ব্যক্তিগত সরকারি গোপনীয় বৈঠকের জন্য কক্ষটি ব্যবহার করে আসছেন।

সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেয়ার জন্য একটি খাট বসানো হয়েছে। তাতে বিশ্রাম নেয়ার মতো বালিশ, চাদর সবকিছুই আছে। মূলত নিজের গোপন কাজগুলোই ওই কক্ষে সারতেন ডিসি, যেখানে অফিসের অন্যদের প্রবেশে বাঁধা ছিল।

আড়ও পড়ুন: শুদ্ধাচার পদক পেয়েছিলেন সেই ডিসি

ওই কক্ষে একাধিক নারীর যাতায়াতকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই কক্ষে একজন নারীর সাথে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অবৈধ মেলামেশার ভিডিওটি ফেসবুকে, ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে মেসেঞ্জারে, মোবাইল থেকে মোবাইলে এবং ইমেইেলে ছড়িয়ে পড়ায় আগে শোনা সেই গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিয়েছে।