মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

২০১৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ভর্তি নীতিমালা ফলে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে কমপক্ষে জিপিএ ৯ দরকার। অন্যদিকে ২০১১ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী কমপক্ষে জিপিএ ৮ হলেই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারত শিক্ষার্থীরা। এতে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছু হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞাপন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। ফলে জিপিএ আট পেয়েছেন কিন্তু ৯ এর কম পেয়েছেন বিজ্ঞান বিভাগের এমন শিক্ষার্থীরা রয়েছেন বেকায়দায়। অবশ্য বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেডিক্যাল কলেজে পড়তে জিপিএ ৭ বা সমান নম্বর দরকার।

দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দুই নিয়মকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন অনেকে। অথচ বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস পড়ে গিয়ে নিজ দেশে চিকিত্সক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রথম ধাপেই পাশ করছেন।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অনেকে ভালো শিক্ষকের কাছে পড়ার বা কোচিং করার সুযোগ পান না। শহরে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা ভালো কোচিং এবং শিক্ষকের কাছে পড়ার সুযোগ পাওয়ার ফলে তারা অপেক্ষাকৃত ভালো করে।

এমতাবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৮ পেলে মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে অধিকসংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের যাচাই বাছাইয়েরও সুযোগ হবে। অন্যথায় জিপিএ ৯ হওয়াতে বিদেশে মেধাবীদের চলে যাওয়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থও দেশ থেকে চলে যাবে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জিপিএ ৮ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে জিপিএ ৬.৫০ শতাংশ নম্বর হলেই শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। আর পাকিস্তানে দরকার হয় জিপিএ ৮.৭০ শতাংশ নম্বর। গত বছর ভারতে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পান।

এর থেকে আট লাখ শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয় এবং এক লাখ ভর্তির সুযোগ পান। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদেরও দরকার হয় জিপিএ ৯। এটি খুবই দুরূহ বলে শিক্ষার্থীরা জানান। বিএমডিসি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে এমবিবিএস পড়তে চলে যাচ্ছেন।

এ নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টে রিট করেন। গত বছরের মে মাসে হাইকোর্ট ভর্তি নীতিমালার একটি অনুচ্ছেদকে বেআইনি ঘোষণা করে। পরে ঐ রায় স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে রিটকারী শিক্ষার্থীরা।

উন্নত স্বাস্থ্য সেবায় বিশ্বে ভারতের অনেক সুনাম। ৫০ শতাংশ নম্বর প্রাপ্তরাই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিয়ে সুনামের সঙ্গে সর্বোন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে। তারা যদি ৫০ শতাংশ নম্বর প্রাপ্তদের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, তাহলে বাংলাদেশ কেন দেবে না, এমন প্রশ্ন অনেক শিক্ষার্থীর।