৪১তম বিজ্ঞপ্তি আগামী সপ্তাহে, চিন্তায় এখনো বিশেষ বিসিএস!

৪১তম বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আগস্ট মাসের মধ্যেই পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন বিসিএস পরীক্ষার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ১৩৫টি শূন্য ক্যাডার পদের চাহিদা পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামী সপ্তাহে ৪১ তম বিসিএসএর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার সম্ভাবনা আছে বলে পিএসসির একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

পিএসসির সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আগেই ৪১তম এই বিসিএসের শূন্য পদের চাহিদা জানিয়েছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদ অনুযায়ী এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৯ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসির কাছে ২ হাজার ১৩৫টি শূন্য পদের সংখ্যা জানিয়ে ৪১তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছে।

৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ৩২৩ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ জন এবং পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার পদে ১০০ জন নিয়োগ পাবেন।

এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে শুল্ক ও আবগারিতে ২৩টি, কর ক্যাডারে ৬০টি, আনসারে ২৩টি, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের ২৫টি, সমবায় ক্যাডারের ৮টি, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা পদে ১২টি, তথ্য ক্যাডারে ৪৭টি, বিসিএস কৃষি ক্যাডারের ১৮৯টি, বাণিজ্য ক্যাডারের সহকারী নিয়ন্ত্রকের ৪টি, স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন, ডেন্টাল সার্জনের ১৪০টি এবং সাধারণ শিক্ষায় ৮৯২টি।

সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসনে ও শিক্ষার সার্বিক গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। এই লক্ষ্যে ৪১তম বিসিএসকে বিশেষ বিসিএস হিসেবে নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা করছে সরকার। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। পিএসসি ওই চিঠি এখনও হাতে না পেলেও এই প্রস্তাবের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সরকারি কলেজগুলোতে প্রায় দুই হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষাসহ নানা ধরণের ছুটিতে রয়েছেন বহু শিক্ষক। যার কারণে বহু সরকারি কলেজের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও শিক্ষক সংকটের কারণে নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া নিয়মানুযায়ী সাধারণ বিসিএসের মাধ্যমে যে পরিমাণ শিক্ষক নেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে আরও কয়েক বছরেও শিক্ষক সংকট নিরসন করা সম্ভব নয়।

যে কারণে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসক নিয়োগের মতো করে শিক্ষক নিয়োগেও বিশেষ বিসিএস আয়োজনের কথা ভাবছে সরকার। শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাবের ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভায় সবাই একমত পোষণ করেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের অনেক সরকারি কলেজগুলোতে প্রভাষক পদে শিক্ষক সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) চাহিদা পাঠানোর হয়েছে।

তিনি বলেন, পিএসসির আয়োজিত সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যে সংখ্যক শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ আসে তাদের দিয়ে এ সংকট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। এখনও অনেক কলেজে রয়েছে, যেখানে বিষয়ভিত্তিকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী কলেজের শিক্ষক ধার করে এনেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। আবার এমনও আছে অন্য শিক্ষকরা বিষয় ভিক্তিক ক্লাস নিচ্ছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হলে এসব সমস্যা লাঘব করা সম্ভব হবে।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, আলিয়া মাদরাসাসহ ৩২৯টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে মোট ১৬ হাজার ৫৫৪টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৫০৭টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ২২১, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২৮৪ এবং প্রভাষক পদে আট হাজার ২৬টি পদ রয়েছে। দেশের ২১৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষক সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। প্রায় চার হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। সবচেয়ে বেশি শূন্য প্রভাষকের পদ। এ পদ খালি আছে প্রায় দুই হাজারটি।

শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবের বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, সরকারি কলেজ উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হলেও সেখানে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমেই এ সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের জন্য অফিসিয়াল আবেদন এখনও আমাদের হাতে এসে পৌছে নি। পেলে আইন পরিবর্তনসহ এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

জানা গেছে, এই বিশেষ বিসিএস আয়োজন করার ক্ষেত্রে পিএসসির চলমান আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। এ আইন পরিবর্তনের জন্য খসড়া আকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সেখান খসড়া আইন চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে পারবে পিএসসি।

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করছে সরকার। আর কিছুদিন পরেই এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর পরের তথা ৪০ তম বিসিএস হবে সাধারণ। ৪১ তম বিসিএস বিশেষ নেওয়ার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।