ইভ টিজিং প্রতিরোধে যা করতে পারেন অভিভাবকরা

মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন
মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন

ইভ টিজিং প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি, পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা নারীনিগ্রহ নির্দেশক একটি কাব্যিক শব্দ। ইভ দিয়ে পৌরানিক আদিমাতা হাওয়া অর্থে সমগ্র নারীজাতিকে বুঝানো হয়। এটি তারুণ্যে সংঘঠিত একধরনের অপরাধ। এটি এক প্রকারের যৌন আগ্রাসন যার মধ্যে রয়েছে যৌন ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, প্রকাশ্যে অযাচিত স্পর্শ, শিস দেওয়া বা শরীরের সংবেদনশীল অংশে হস্তক্ষেপ।

সাম্প্রতিক সময়ে রাস্তা -ঘাটে, স্কুল, কলেজের সামনে, গাড়ীতে কিংবা শপিংমল সহ মেয়েদের চলাচলের জায়গাগুলোতে এর ব্যাপকতা আমাদের চরমভাবে ভাবিয়ে তোলে। ইভটিজিং এর স্বীকার হয়ে বহু মেয়ে আত্মহত্যার পথও বেঁচে নিয়েছে। যদিও এটা কোন সমাধান নয়।

বিদ্যালয় পরিদর্শন করা কিংবা বিভিন্ন কাজে দেশের পাড়া মহল্লায় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ হয়। প্রায় সময়ই স্কুল ছুটির সময় কিংবা শুরুর সময় রাস্তার মোড়ে মোড়ে একদল তরুনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তাদের অঙ্গভঙ্গিই খারাপ কিছুর ইঙ্গিত বহন কর। কিন্তু এ সময়ে তাদের এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার কথা ছিলো না। তারা তাদের বিদ্যালয়ে কিংবা বাড়িতে থাকার কথা।

গত কিছুদিন আগে একটা বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে মোটরসাইকেলে অফিসে ফিরছিলাম। একটা নির্জন জায়গায় কয়েকজন ছেলের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। একটু সামনে গিয়ে থামলাম। ঠিক কয়েক মিনিট পর দেখলাম বিপরীত দিক থেকে কয়েকটি মেয়ে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছে। একটু সামনে এগুতেই ছেলেগুলো মেয়েদের পথ আটকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। কেউ শিস দিচ্ছে, আবার কেউ বাজে কথা বলছে।

মেয়েদের মধ্য থেকে দু একজন প্রতিবাদ করলেও বেশিরভাগই ছিল নিরব। মাথা নিচু করে সামনে চলছে তারা। হয়তো ভয়ে কিংবা লজ্জায় তারা এমনটি করেছে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়ানো সম্ভব নয়। এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করতেই ছেলেগুলো দৌড়ে পালালো। ইচ্ছে করলে চলে আসতে পারতাম। কিন্তু প্রতিবাদ তো কাউকে না কাউকে করতেই হবে।

এটিতো শুধু একটি উদাহরণ। এ রকম শত শত ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। সন্তান বিপথে গেলে কিংবা বখাটে হলে অভিভাবকগন কি এর দায় এড়াতে পারেন? আপনার সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে এটা কি আপনার দেখার দায়িত্ব নয়?

অবশ্যই দেখা উচিত, জানা উচিত। তাদের শোধরানোর প্রথম দায়িত্ব আপনাদের। পাড়ায় মহল্লায় তরুনদের বিভিন্ন গ্যাং এর কথা আজকাল আমরা শুনতে পাই।যা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। তরুন প্রজন্ম কোন পথে যাচ্ছে! মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? কেউ দেয়নি। অভিভাবকগনের সন্তানের প্রতি উদাসীনতা আর পারিবারিক শিক্ষা না দেওয়া অনেকাংশে দায়ী।

ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি। এর প্রতিকার প্রয়োজন।ইভটিজিং এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।দন্ডবিধির আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে,যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্ত সৃষ্টি করে, কোনো প্রকাশ্য স্থানের কাছাকাছি কোনো অশ্লীল কাজ করে অথবা কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো অশ্লীল গান, গাথা সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবে।

দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান আছে।এধারায় বলা আছে,যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গবঙ্গি বা কোনো কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদন্ড কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে।

তরুনরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ। সেই তরুনদের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক কার্যক্রম আশাকরি। প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার অধিকার রয়েছে। অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। কিন্তু অপরাধ করার আগে একটু ভাবা উচিত। মানুষ হিসেবে আমাদের হিতাহিত জ্ঞান রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের বিবেক দিয়েছেন।

অনেক অভিভাবক তাদের সন্তান একটু বড় হলেই শাসন করতে ভয় পান। এটা কাম্য নয়।আপনার সন্তানের দেখভাল করার দায়িত্ব আপনার। মানুষকে সন্মান করতে হয় এটা সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই শিখাতে হবে। রাস্তা ঘাটে, যানবাহনে যেখানেই হোক কোনো মেয়েকে প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি কিংবা উত্ত্যক্ত করা যাবে না এটা সে পারিবারিক ভাবেই শিখবে। পরিবার হচ্ছে একজন মানুষের প্রথম বিদ্যাপীঠ। সেখানে সে বেসিক বিষয়গুলো শিখে।

ইভটিজিং নামক এই সামাজিক ব্যাধি দূর করতে সকল অভিভাবক তাদের সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা একান্ত জরুরী।

লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার