কারাগার থেকে বের হয়েই কলেজছাত্রকে খুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কলেজছাত্র মো. ইকরাম হোসেন (১৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।ভাগ্নিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করার জেরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইকরামকে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ১০ আগস্ট রাতে দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ইকরামকে কুপিয়ে হত্যা করে বখাটেরা।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইকরামের এক ভাগিনাও সম্পৃক্ত আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো- সরাইল উপজেলার বড্ডাপাড়া এলাকার আবুল ফজলের ছেলে ইমরানুল হাছান সাদী (১৯), বারজীবিপাড়া এলাকার মৃত মোতালিব মিয়ার ছেলে নাজিমউদ্দিন (৫৫) ও রফিক মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম (৪০)।

ক্ষোভ থেকেই মামা ইকরামকে হত্যার মিশনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ভাগিনা সাদী। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, নিহত ইকরাম হোসেন সরাইল উপজেলার বর্ডারবাজার এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে। তিনি সরাইল ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

উপজেলার বারজীবিপাড়ায় তার খালাতো বোন লাভলী আক্তারের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতেন ইকরাম।লাভলীর মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিনও ইকরামের সঙ্গেই কলেজে পড়েন। সুমাইয়াকে প্রতিবেশী রবিউল্লাহর ছেলে মো. শিমুল প্রায়ই ইভটিজিং করত।

ইকরাম ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করার পর গত বছরের ১৩ অক্টোবর তৎকালীন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে ইসরাত বখাটে শিমুলকে আট মাসের কারাদণ্ড দেন। তখন থেকেই ইকরামের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয় শিমুলের। গত ঈদুল ফিতরের আগে সাজা ভোগ করে কারামুক্ত হয় শিমুল।

আর নিহত ইকরাম কোনো একসময় তার খালাতো বোনের ছেলে সাদীকে মারধর করেছিল, বিধায় তার ওপর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সাদী প্রায়ই ইকরামের সঙ্গে ঘুমাত। তাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য শিমুল সাদীকে উসকানি দেয়। মাস দুয়েক আগে তারা দুজন স্থানীয় একটি বিলে দেখা করে ক্ষোভ মেটানোর জন্য ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনামতে, গত ১০ আগস্ট দিবাগত রাত ৩টার দিকে সাদী ঘরের দরজা খুলে দিলে শিমুল ও তার ভাই সোহাগ দা, ছুরি ও বস্তাসহ ঘরে ঢুকে।

সাদী তার ঘুমন্ত মামা ইকরামের পা চেপে ধরে আর শিমুল ও সোহাগ দা, ছুরি এবং ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

পরে মরদেহ গুম করার জন্য প্লাস্টিকের বস্তায় বেঁধে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ভোরের আলো ফোঁটার কারণে মরদেহ গুম করতে না পেরে ঘরেই লুকিয়ে রাখে।

পরে ইকরামকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য লাভলী ঘরের দরজা খুলে দেখেন মেঝেতে বস্তাবন্দি দুই পা বের হয়ে আছে। এ সময় লাভলী চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ইকরামের মরদেহ দেখতে পান।

এ ঘটনায় নিহত ইকরামের বাবা শহীদ মিয়া বাদী হয়ে ১১ আগস্ট সরাইল থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ আমলার এজাহারনামীয় আসামি সাদী, নাজিমউদ্দিন ও নাজমাকে গ্রেফতার করে।