মুসলিমরা কেন নির্যাতিত ও ইতিহাসের একটি গল্প

কিছুদিন আগে গল্পটি বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মধ্যযুগে পৃথিবীতে ত্রাস সৃষ্টিকারী মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খান ১২৫৮ সালে ইরাকের বাগদাদ শহর দখল করার পর, গোটা শহরে আগুন লাগিয়ে দেয়।

আমীর আলীর মতে, ‘বাগদাদ আক্রমণে যে ধ্বংসলীলা অনুষ্ঠিত হয় তা থেকে অন্যান্য শহরে কি ঘটেছিল তার আভাস পাওয়া যায়। তিনদিন ধরে শহরের পথে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল এবং তাইগ্রিস নদীর পানি মাইলের পর মাইল রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল।’

ঐতিহাসিকদের কারো কারো মতে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে হালাকু খান হত্যা করে। ইবনে খলদুনের মতে, মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে ১,৬০,০০০ লোক প্রাণ হারায়, মতান্তরে ২০,০০,০০০ অধিবাসীদের ১৬,০০,০০০ জন লোক মারা যায়।

দজলা ফোরাত নদী রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। শত শত বছরের পরিশ্রমে নির্মিত বাগদাদের মসজিদ, প্রাসাদ, লাইব্রেরী সভ্যতা সংস্কৃতি যেন মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় হালাকু খানের সেনাবাহিনী।

বাগদাদ ধ্বংসের নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে ঐতিহাসিক ব্রাউন বলেন, ‘সম্ভবত কখনোই এত বড় ও সমৃদ্ধশালী একটি সভ্যতা এত দ্রুত অগ্নিশিখায় বিধ্বস্ত ও রক্তধারায় নিশ্চিহ্ন হয়নি। বাগদাদ ধ্বংসের পর এই জালিম শাসক হালাকু খান বাগদাদের সবচেয়ে বড় আলেমের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। কিন্তু কোনো আলেম-ই হালুকু খানের সামনে যেতে রাজি ছিল না। উপায়ান্তর না দেখে কাদিখান নামের এক তরুণ মাদ্রাসা শিক্ষক, যার এখনো ঠিক মতো মুখে দাড়ি গোঁফ উঠেনি, সেই তরুণ হালাকু খানের সাথে দেখা করতে রাজি হলেন।

হালাকু খানের সাথে দেখা করতে যাবার সময়ে সেই তরুণ আলেম তার সঙ্গে একটি উট, একটি ছাগল এবং একটি মোরগ নিয়ে যান। এবং এগুলো হালাকু খানের রাজ প্রসাদের সামনে রেখে দেন।

হালাকু খান তরুণ আলেমকে দেখে বললেন, ‘আমার সাথে দেখা করার জন্যে তোমাকে ছাড়া আর কোনো বড় আলেমকে বুঝি তারা খুঁজে পায়নি?’

তরুণ আলেম তখন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হালাকু খানকে বললেন, ‘আপনি যদি উঁচু-লম্বা-বড়সড়ো কারো সঙ্গে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটি উট আছে; আপনি যদি দাড়ি-ওয়ালা কারো সঙ্গে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটি ছাগল বাঁধা আছে; আর আপনি যদি উচ্চ কণ্ঠের কারো সঙ্গে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটি মোরগ আছে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কাউকে ডেকে কথা বলতে পারেন।

তরুণ আলেমের কথা শুনে হালাকু খান বুঝলেন যে, ছেলেটির দাড়ি না থাকলেও, এবং বয়স কম হলেও ভালোই জানে। এরপর, তরুণ আলেমকে হালাকু খান বললেন, ‘আচ্ছা, বলো তো, আমাকে বাগদাদে কেন আসতে হলো, এর কারণ কি?’

তরুণ আলেম জবাবে বললেন, ‘আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে আমাদের কর্মফল। আমরা মুসলমানরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের গুরুত্ব বুঝিনি। আমরা ভোগবাদিতা ও আনন্দে মেতে উঠেছি। আমরা ধন-সম্পদ, ঘর-বাড়ি, এবং বড় বড় পদের পিছনে ছুটে চলেছি। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিয়ামতগুলো তুলে নেয়ার জন্যে, এবং আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে আপনাকে এখানে পাঠিয়েছেন।’

এরপর, হালাকু খান বলেন, আচ্ছা, তাহলে বলো তো, আমাকে এখান থেকে আবার বের করে দিতে পারে, এমন কী আছে?

তরুণ আলেম কাদিখান বলেন, ‘যদি আমরা মুসলিমরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের গুরুত্ব বুঝতে পারি, এবং আমরা মুসলিমরা যদি একে অপরের পিছনে লেগে না থাকি, তাহলে আপনি আর এখানে বেশিদিন থাকতে পারবেন না।

এরদোয়ান গল্প শেষে বলেন- প্রিয় ভাইয়েরা, আমি কি বলতে চেয়েছি, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝেছেন? আমাদের নিজেদের একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ বাদ দিতে হবে। এবং সবাইকে কেবল আল্লাহর জন্যে ভালোবাসতে হবে। যদি আমরা একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকি, তাহলে আমাদের অবস্থাও বাগদাদের ধ্বংসস্তূপের মুসলিমদের মতোই হবে।