রক্ত দিলে আরো বেশি রক্ত তৈরি হয়

সন্ধানী বাংলাদেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের পথিকৃৎ। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ২৫টি ইউনিট একযোগে কাজ করছে। সন্ধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইহসানুল করিম তানজীম। ঢামেকের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি — মোতাহার হোসেন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কেমন আছেন?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: ভালো আছি। তবে বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় একটু ব্যস্ত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি কখন থেকে সন্ধানীর সঙ্গে যুক্ত আছেন?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: আমি সন্ধানীর সাথে যুক্ত হয়েছি প্রথম বর্ষ অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে। আমি যখন সন্ধানীতে কাজ করি তখন কার্যকরী পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলাম। পরের বছর যুগ্ম অর্থ সম্পাদক, পরে অর্থ সম্পাদক। সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রকোপে আপনাদের ব্যস্ততা কেমন?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ব্যস্ততা বলতে খুব বেশি না। রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। যেসব রোগীদের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে সাথে ব্লিডিং হচ্ছে তাদের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। আমাদের এখানে যতগুলো ব্লাডের রোগী আসছে তাদের প্রয়োজনের তুলনায় ব্লাড খুব কম রোগীদের লাগছে। তবে ডেঙ্গু হলেই ব্লাড লাগবে, এই ধারণা সঠিক নয়। যদি ব্লিডিং হয় রক্তে প্লাটিলেট কমে যায় তখন রক্ত লাগে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে রক্তের চাহিদা কেমন?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে রক্তের চাহিদা একটু বেশি। তবে খুব বেশি চাপ নয়। আমাদের চাপের কারণ ঢাকা মেডিকেলের চাইতে বাইরের হাসপাতালগুলোতে আমাদের রক্তের সাপ্লাই বেশি দিতে হচ্ছে। যখন ওইসব হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীরা রক্তে পায় না তখন আমাদের এখান থেকে লোক পাঠাতে হয়। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আমরা বেশি রক্ত সাপ্লাই দিচ্ছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা মেডিকেলে চাইতে বাইরে হাসপাতালগুলোতে রক্ত বেশি সরবরাহের কারণ কি?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: এর কারণ হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলে রোগীদের সংখ্যা এত বেশি যে রোগীদের ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। যার ফলে ইমারজেন্সি রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। রক্ত ইমার্জেন্সি রোগীদের বেশি লাগছে যে কারণে ঢাকা মেডিকেলের চাইতে বাইরের হাসপাতালগুলোতে আমাদের রক্তের সরবরাহ বেশি দিতে হচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রক্ত সংগ্রহ করতে কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: রক্ত সংগ্রহ করতে আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একটি হলো, আমাদের যারা ডোনার আছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ব্লাড দিতে চাচ্ছে না। কারণ তারা মনে করছে যদি তাদেরও ডেঙ্গু হয় তাহলে হয়তো এখন রক্ত দিলে পরে সমস্যা হতে পারে। যে কারণে অনেকে রক্ত দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এ বিষয়টা একটু সকলকে বুঝাতে সমস্যা হচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রক্তের চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে পারছেন কিনা?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: আসলে ভাই, চাহিদা অনুযায়ী যোগান তো খুব বেশি না। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে যেসব রোগীদের রক্ত লাগছে ওইসব রোগীদের আমরা রক্ত দেওয়ার চেষ্টা করতেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা নেগেটিভ ব্লাড। নেগেটিভ ব্লাড খুব কম থাকায় ম্যানেজ করতে সমস্যা হচ্ছে। যদি নেগেটিভ ব্লাড ম্যানেজ করতে সমস্যা হয় তাহলে আমরা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক ও সন্ধানীর বিভিন্ন শাখায় যোগাযোগ করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের রক্তদানের আগ্রহ সম্বন্ধে আপনার মতামত?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের রক্ত দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ বেশ ভালো। তবে এখনও অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা মেডিকেল শিক্ষার্থী হয়েও ব্লাড দেওয়ার ব্যাপারে সংকোচ বোধ করেন। তবে আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি। এখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ব্লাড দিতে আগ্রহী। তারা নিজে থেকে এসে ব্লাড দেয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কিছু শিক্ষার্থী রক্ত দিতে ভয় পায় যে পরে যদি শরীরের সমস্যা হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: রক্ত দিলে শরীরের তেমন কোন সমস্যা হয় না। ব্লাড দিলে ব্লাড তৈরি হয়। এটা জানা প্রয়োজন। এটা যে কেউ জানলে ব্লাড দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা ১২০ দিন অন্তর অন্তর তৈরি হয়। বাকি রক্ত কণিকা গুলি সাত থেকে আট দিনের মধ্যে তৈরি হয়। ৪০০ মিলি ব্লাড দিলে এক থেকে দু দিনের মধ্যে শরীর পূরণ করে নেয় । এখানে ভয়ের কিছু নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডেঙ্গু মহামারীতে রক্ত দেয়ার পাশাপাশি আরো কোন সেবামূলক কাজ করছেন কিনা?
মো.ইহসানুল করিম তানজীম: জ্বি, আমরা রক্ত দেয়ার পাশাপাশি রোগীদের নানাভাবে সাহায্য করছি। আমাদের একটি টিম আছে। আমাদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেখানে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব পড়াশোনা করেন। ঢাকা মেডিকেলে ডেঙ্গুর কারণে ক্রিটিক্যাল অবস্থা তৈরি হওয়ায় পেশেন্টের নানাভাবে সহযোগিতা করতে আমাদের মেডিকেলে যেতে হচ্ছে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আমরা প্রায়ই হাসপাতালের রোগীদের নানাভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি সন্ধানীর সঙ্গে যুক্ত আছেন। আপনার অনুভূতিটা কেমন?
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: অনুভূতির কথা বলতে গেলে অসাধারণ একটা অনুভূতি কাজ করে। আমরা মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারছি। এতে আমাদের মনটা ভালো হয়ে যায়। যখন একটি রোগীর ব্লাড লাগে আর আমরা ওই বাদ দিয়ে ওই রোগীকে বাঁচাতে পারি তখন আমাদের মনে অনেক ভালো লাগা কাজ করে, মনে অনেক শান্তি পাই। ওই সময়ের অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো নয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মো. ইহসানুল করিম তানজীম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসেও ধন্যবাদ।