দুঃস্বপ্ন (পর্ব-৩)
- ০১ আগস্ট ২০১৯, ১৮:০৫
রিদি অফিস থেকে ফিরে নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখল ইরি আর বর্ণ টিভির সামনে বসে টিভি দেখছে আর হেসে হেসে কথা বলে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। দুজনের এমন হাসি দেখে রিদির মেজাজ চড়ে গেলো। এমনিই আজ ওর অফিসের বস ওকে অযথা কাজ নিয়ে বকাঝকা করছে। তারপর বাড়ি এসে এমন দৃশ্য দেখে রাগে হাত পা নিশপিশ করছে।
রিদি শব্দ করে দরজা লক করলো। তাতে ইরি আর বর্ণ দুজনেই চমকে উঠলো। বর্ণ রিদিকে দেখে বলল, রিদু তুমি কখন এলে? রিদি ওর প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে রুমে চলে গেলো। বর্ণ ইরির দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে রিদির পিছনে গেলো। রিদি রুমে গিয়ে বোরকা খুলে চুলটা মেলে দিলো। বর্ণ রিদিকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি যে বললা আসতে লেট হবে? রিদি শক্ত গলায় বলল, কেন লেট করে আসলে সুবিধা হতো বুঝি!
মানে? তুমি আমায় আনতে যাওনি কেন? আরে তুমিও তো বিকালে বললা ফিরতে লেট হবে। আমার কাজের চাপ কম ছিলো। তাছাড়া শরীরটা ভালো লাগছিলো না। তাই তো জলদি বাসায় আসছি। তাও মাত্র আধা ঘন্টা আগে। মাত্র ইরি কফি দিলো। সেটা নিয়ে টিভির সামনে বসলাম। ওহ তা ইরির হাতে কফি খেয়ে শরীর বুঝি চাঙ্গা হয়ে গেছে? দিস ইজ রিডিওকুলাস রিদু। তুমি আবার আমায় সন্দেহ করছো। হ্যাঁ করছি। তো? কিছু বলার নেই যাও ফ্রেস হয়ে নাও।
বর্ণ ইচ্ছা করে রিদির কথায় প্রতিউত্তর করল না। একেতো সকাল থেকে ওর শরীর খুব খারাপ লাগছে। বিকাল থেকে মনে হচ্ছে জ্বর আসছে। আর এখন রিদুকে কিছু বললে রিদু চেঁচামেচি করবে। যেটা ইরি শুনলে খুব বাজে লাগবে। বর্ণ চায় না ওদের স্বামী স্ত্রীর মাঝের কথা ৩য় ব্যক্তি জানুক।
রিদি ফ্রেস হয়ে রান্না ঘরে গেলো। নিঃশব্দে রান্না করে টেবিলে খাবার দিলো। বর্ণ অল্প একটু খেয়ে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। আর ইরি অনেক রাতে খায় তাই ওর খাবারটা ঢাকা দিয়ে রেখে রিদিও ঘুমাতে গেলো।
৫!!
রাতে গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো রিদির। পাশে শুয়ে বর্ণ গোঙাচ্ছে। রিদি বর্ণের গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো। শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। রিদি জলদি বর্ণের গায়ে হাত রেখে বর্ণকে ডাক দিলো। বর্ণ কিছু না বলে রিদিকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বলল, রিদু এভাবে থাকো। ভালো লাগছে।
রিদি উঠে বর্ণের জ্বর মেপে দেখল, ১০৪°। রিদি মাথায় পানিয়ে দিয়ে বর্ণর শরীর মুছে দিলো। বর্ণের ঠান্ডায় এলার্জি আছে। অতিরক্ত ঠান্ডা লাগলে ওর হাত পা ব্যাথা করে। রিদি বেশ খানিক সময় হাত পা মালিশ করে দিতে দিতে কান্না করে দিলো এটা ভেবে সন্ধ্যাবেলা শুধু শুধু বর্ণের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। অথচ বর্ণের শরীর সত্যি খারাপ ছিলো। বেশ খানিক পর বর্ণ রিদিকে ডাক দিয়ে বলল, রিদু বুকে আসো তো। তোমাকে বুকে না নিলে ভালো লাগে না।
রিদি বর্ণের বুকে মাথা দিলো। এখনো গায়ের তাপ প্রচন্ড। রিদির গায়ের তাপ লাগছে খুব। রিদি তবুও শক্ত করে বর্ণকে আকড়ে ধরল। সারারাত বর্ণ ছটফট করল। সারা রাত ছেড়ে ছেড়ে বর্ণের জ্বর আসল। সকালে অফিসে ফোন করে রিদি ছুটি নিলো। এতে অবশ্য ওর বসের বকা শোনা লাগছে। কিন্তু বর্ণের জন্য ও সব পারে। এতটাই ভালোবাসে যে, বর্ণের জন্য সব করতে পারে। তাই তো বর্ণকে সবসময় আগলে রাখে, সন্দেহ করে। নিজের বাবার পর রিদি যদি কোন ছেলেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে থাকে তবে সেটা বর্ণ। তাই তো অমূল্য রত্নের মত মন সিন্দুকে বন্দী রাখতে চায় বর্ণকে। কিন্তু রিদি ভুলে গেছে ভালোবাসা বন্দী রাখার জিনিস না, বিশ্বাস ভরসার জিনিস।
সকালেও বর্ণের জ্বর কমলো না। রিদি বর্ণের খুব কেয়ার করছে। ইরি এসেছিলো রিদিকে হেল্প করতে। কিন্তু রিদি ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। তারপর বলল, যদি পারে দুপুরের রান্নাটা করতে ও বর্ণকে নিয়ে হসপিটালে যাবে। ইরি ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে রিদিকে বলল, ও ওদের সাথে হসপিটালে যাবে কিনা? কিন্তু রিদি না করে দিলো।
হসপিটালে নিয়ে বর্ণকে বেশ কিছু টেষ্ট করানোর পর জানা যায় বর্ণের ম্যালেরিয়া হয়েছে, দু তিনদিন হসপিটালে রেখে ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। রিদি কোন উপায় না পেয়ে ওর আর নিজের দু পরিবারকে জানিয়ে দিলো। পরিবারের কিছু লোক বিকালের মধ্যে চলে আসলো। রাতে হসপিটাল থেকে সবাই ফেরার সময় ইরিকে রেখে আসতে চাইল। রিদি না না করলেও সবাই রিদির কথার বিরুদ্ধে গিয়ে ইরিকে হসপিটালে রেখে আসে।
রাত বারোটা,
বর্ণকে দেয়া স্যালাইনটা শেষ হয়ে গেছে। নার্সকে ডাকা দরকার। কিন্তু ইরি হাসপাতালের কিছুই চিনে না। তাই ইরিকে বর্ণের কাছে রেখে ও নার্সকে ডাকতে গেলো।
বর্ণের প্রচন্ড বমি পাচ্ছে। শুয়ে থাকতে থাকতে ঘাড় মাথা ধরে গেছে তাই উঠতে চেষ্টা করল। ইরি সেটা দেখে বর্ণকে উঠতে হেল্প করলো। বর্ণ লম্বা চওড়া সুস্বাস্থের অধিকারি। শ্যমলা গায়ের রঙ কিন্তু বেশ মোহময়ী দেখতে। বর্ণকে তুলে বসাতে মেয়েদের অনেকটা বেগ পেতে হবে। বর্ণ একা উঠতে চাইলেও ইরি একরকম জোড় করেই বর্ণকে সাহায্য করল। অনেকটা জড়িয়ে ধরার মত করে ইরি বর্ণকে তুলে বসিয়ে পাশ ফিরতেই দেখে রিদি অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।
ইরিও এত দিনে রিদির সন্দেহবাদী হওয়ায় কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। বর্ণ জ্বরের ঘোরে থাকলেও রিদির রাগি চেহারা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো। আর কেউ না চিনুক বর্ণতো রিদিকে খুব ভালো করে চিনে। রিদি ওদের কিছু না বলে নার্সকে বলল, বর্ণকে দেখতে।
নার্স বর্ণের স্যালাইন খুলে দিলো কিন্তু ক্যানোলাটা হাতে লাগানো অবস্থায় বলল, এখন নরম কিছু খেতে পারবে। পরে দরকার হলে আবার স্যালাইন দিবো।
নার্স ঔষধ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতেই রিদি ওর পাশে থাকা হটপট থেকে জাউভাত বের করে বর্ণকে খাইয়ে দিতে লাগল। সন্ধ্যোর পর রিদির শ্বাশুড়ি জাউভাত পাঠিয়ে দিয়েছে। কারন রিদি জানে স্যালাইন বন্ধ করার পর নরম কিছু খেতে দেয়। রিদি নিঃশব্দে বর্ণকে খাইয়ে ইরিকে বলল, __ইরি তুই পাশের সিটে শুয়ে পর আমি বর্ণের পাশে আছি। ডাবল বেডের কেবিন নেয়ায় ইরি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে অপর দিকে মুখ করে শুয়ে পরার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল।
রিদি বর্ণকে শুয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বর্ণ ভাবছে অন্য কথা। রিদির এমন চুপ থাকা বর্ণের কাছে মোটেও সুবিধার লাগছে না। ঠিক যেমন ঝড়ের আগে থমথমে আবহাওয়ার তার পূর্বাস। কিন্তু বর্ণ এখন বেশি ভাবতে পারছে না। শরীর ভাবার মত অনুমতি দিচ্ছে না। রিদির একটা হাত নিজের বুকের সাথে আকড়ে ধরে ঘুম দেশে পাড়ি জমাল। আর রিদি বর্ণের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে বলল, ভালোবাসি বর্ণ। একটু বেশিই ভালোবাসি। তাই তো হারাতে ভয় পাই।
৬!!
দুদিন পর বর্ণকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো। বেশ কদিন লাগল বর্ণ পুরোপুরি সুস্থ হতে। এ কদিন রিদি সব কিছু ভুলে বর্ণের সেবায় পরে ছিল। আজ দুজনেই অফিস যাচ্ছে। বর্ণ বেশ কদিন পর অফিস আসায় মাথায় কাজের পাহাড় পড়ল। রিদির অফিসেও একই অবস্থা।
অফিসের পুরোনো সব কাজ ঠিকঠাক করতে করতে সপ্তাহ খানিক দুজন দুজনকে একদম সময় দিতে পারেনি। বর্ণ বাসায় এসে দেখতো রিদি খেয়েই শুয়ে পড়ে। বর্ণের কেয়ার করলেও কেন জানি বর্ণ রিদিকে সবসময় গৃহিনী হিসাবে চায়। ও চায় ও অফিস থেকে আসলে রিদি ওকে টাইম দিক, ওকে ভালোবাসুক। কিন্তু রিদি সে নিজেই ক্লান্ত থাকে খুব। তাই বর্ণও আর কিছু বলে না। রিদিকে জব করার পারমিশন তো ঐ দিয়েছিলো। তাই রিদির ব্যস্ততা বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু রিদি ভুলে যায় বর্ণ ওর স্বামী, আর স্ত্রীর কাছে স্বামীর কিছু চাওয়া পাওয়া থাকে।
আজ বর্ণ বাসায় ফিরে দেখে রিদি ঘুমিয়ে গেছে। ইরি আর কয়েক সপ্তাহ আছে ওদের বাসায়। তারপর হোস্টেলে চলে যাবে।
বর্ণ বড্ড ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ল। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে। অতিরিক্ত চাপে ঘাড় মাথা খুব ব্যাথা করছে ওর। বর্ণকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে ইরি বলল, ভাইয়া ফ্রেস হয়ে নিন। আমি খাবার দিচ্ছি। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমি পরে খেয়ে নিবো। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে। ওহ। কফি করে দিবো! নাহ। কফি খেলে রাতে ঘুম হবে না। তুমি টেনশন করো না। আমি মেডিসিন নিয়ে নিবো।
ভাইয়া আমার কাছে একটা মাথা ব্যাথার লিকুয়িড ঔষধ আছে। কপালে কতক্ষন ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যাথা দ্রুত কমে যায়। সেটা দিবো? আচ্ছা দাও। ইরি ঔষধ এনে বলল, ভাইয়া আমি ম্যাসাজ করে দিবো? না না ঠিক আছে আমি নিজে দিয়ে নিবো। ভাইয়া আমাকে শালী না ভেবে ছোট বোন ভাবুন না প্লিজ। আমি তো আপনাকে দুলাভাই না বড় ভাই মানি। আর জানেন তো আমাদের সমাজে বড় ভাইয়ের স্থান বাবার মত।
ইরির কথা শুনে বর্ণ হাসি দিয়ে বলল, ওকে বোনু দাও। ইরি বর্ণের কপালে ম্যাসাজ করতে করতে বলল, ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলি? বর্ণের বেশ ভালো লাগছে। তাই চোখ বন্ধ করেই বলল, হ্যাঁ বলো। তার আগে আপনি আমাকে তুুমি তুমি বলা বন্ধ করে তুই বলুন। ছোট বোনকে কেউ তুমি বলে? আচ্ছা বল। ভাইয়া আমি আসলে------ কি হলো বল? আগে বলুন আপনি কিছু মনে করবেন নাতো? নারে পাগলী বল। আসলে ভাইয়া আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি।
বর্ণ চোখ খুলে ইরির দিকে তাকিয়ে বলল, ওহ ওয়াও । এতে মনে করার কী আছে? পরিবারের কেউ মানবে না! কেন ছেলে কী ভালো নয়? না না ভাই ছেলে খুব ভালো। দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, প্রতিষ্ঠিত। তাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও ভালো। তবে না মানার পিছনে কারন কী? ভাইয়া আসলে সে ছেলেটা অলরেডি বিবাহিত! মানে? (ইরির কথা শুনে বর্ণ চমকে দাড়ালো।) ভাইয়া প্লিজ উত্তেজিত হবেন না।
বর্ণ এক রকম কঠিন গলায় বলল, উত্তেজিত হবো নাতো কী হবো! আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড ইরি! মানে তোর মত শিক্ষিত, স্মার্ট একটা মেয়ে কিনা একটা বিবাহিত ছেলের প্রেমে পড়লো? হোয়াই? ভাইয়া প্লিজ আগে পুরো ঘটনাটা শুনুন! আচ্ছা বল! ভাইয়া ছেলেটা বাবার বন্ধুর ছেলে। বাবার বন্ধুর ছেলে হিসাবে আমাদের বাসায় প্রায়ই আসত। সে সুবাদে তার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তখন সে বলত তার স্ত্রীর সাথে সে সুখে নেই। আমি নিজেও তার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। তার স্ত্রীর সাথে কদিন পর তার লিগ্যালী ডিভোর্স হবে। তখন তাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করতে গিয়ে তার প্রতি এতটা আকর্ষিত হয়ে পড়েছি যে তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।
ইরি কাউকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিতে হলে জরুরি নয় যে তার গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রী হতে হবে। ছোট বোন বা বন্ধু হিসাবে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করতে পারতে! রিলেশনে জরানোর কী দরকার ছিলো? আমি জানি ভাইয়া আমি ভুল করেছি। কিন্তু ভুল তো একটা করে ফেলছি। সেটা কিভাবে শুধরাবো! তো তারপর কী হলো!
আমাদের বাসায় সবটা জেনে গেছে। সেটা নিয়ে খুব সমস্যা হয়েছে। আমি বাসার সবাইকে রাজি করানোর সব চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যার্থ হয়েছি। বাবার সাথে তার বন্ধুর সাথেও ঝগরা হয়েছে। বাবা মা আমার সাথেও ঠিকভাবে কথা বলে না। পরিবারে খুব অশান্তি হচ্ছে। ইরি যে সম্পর্কের কারনে পরিবারে এত অশান্তি সে সম্পর্ক কী রাখা ঠিক? ভাইয়া আমার সাথে পলাশের সম্পর্কটা এখন এমন একটা পর্যায়ে যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না। মানে?
মানে----- আসলে------- (তারপর ইরি নিশ্চুপ) কী হলো বল! (অনেকটা ধমক দিয়ে) আসলে ভাইয়া আমরা ফিজিক্যালী অনেক কাছে এসে পড়েছি। কী? কী বলছিস এসব ইরি! (ইরি নিশ্চুপ)
বর্ণ রাগী গলায় বলল, আচ্ছা তোরা আজকালকার মেয়েরা এত স্টুপিড কেন? সম্পর্ক তৈরী হতে পারে না অথচ তোরা শারীরির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়িস। একবারও ভবিষ্যতের কথা ভাবিস না তোরা! কেন? আমার আর তোর বোনের বিয়ের আগে নয় বছরের সম্পর্ক ছিলো অথচ নয় বছরে আমরা কখনো আমাদের লিমিট ক্রস করিনি। তাহলে তোরা কেন পারিস না?
ভাইয়া আমি জানি আমি মস্তবড় ভুল করে ফেলছি। কিন্তু ভাইয়া পলাশ খুব ভালো ছেলে ও আজ কালকার ছেলেদের মত না। ওকে আমি ছেড়ে যাবার কথা বলতেই পাগলের মত করে। ও বাবার পায়ে ধরে পর্যন্ত আমাকে তার কাছে চেয়েছে। ডিভোর্স হবার এক সপ্তাহের মাথায় আমাকে বিয়ে করবে বলছে। কিন্তু আমার বাবা মা, কাকা মানছে না। ভাইয়া আপনাকে বলার কারন হলো আমাদের পরিবারে আপনাকে সবাই খুব মানে। আপনি কি একটু তাদের বুঝাতে পারেন না! প্লিজ প্লিজ প্লিজ ভাইয়া বাবা আর কাকাকে বলুন পলাশকে মেনে নিতে। ওকে ছাড়া আমি পাগল হয়ে যাবো।
কথাগুলো বলতে বলতে ইরি কান্নায় ভেঙে পড়ল। নিজের সামনে এভাবে একটা মেয়েকে কান্না করতে দেখে বর্ণের প্রচন্ড খারাপ লাগছিলো। বর্ণ ইরির কাঁধ ধরে ওকে সোফায় বসিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিয়ে একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ইরিকে বুঝাতে শুরু করল। কিন্তু কপাল খারাপ রিদি এতক্ষন ওদের কথা না শুনলেও ওদের এই হাত ধরা চোখের জল মুছিয়ে দেয়ার বিষয়টা দেখে বর্ণের সামনে এসে দাড়িয়ে কতক্ষন বর্ণের দিকে তাকিয়ে থেকে রুমে চলে গেলো।
ইরি না বুঝতে পারলেও বর্ণ ঠিকই রিদির চোখের ভাষা পড়তে পারল।
চলবে
উক্ত গল্পের কাহিনী চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তাই ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।