মাদ্রাসায় যৌন হয়রানি: কী করছে কর্তৃপক্ষ?

১১ জন মাদ্রাসা ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাব শনিবার তাকে আটক করে। এর আগেও নারায়ণগঞ্জের আরেকটি মাদ্রাসায় ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করা হয়।

সম্প্রতি এসব ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে: কর্তৃপক্ষ এসব আবাসিক ও কওমী মাদ্রাসার ওপর কতোটা নজর রাখছে?

নারায়ণগঞ্জে র‍্যারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুস সাকিব বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দুজন ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকের অভিযোগের পর তারা ঐ মাদ্রাসাটির উপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, "এই মাদ্রাসার যিনি বড় হুজুর, তার বিরুদ্ধে আগেই ভাসা ভাসা এমন সব কথা শোনা গেছে। প্রাথমিক সত্যতার পর আমরা মাদ্রাসায় অভিযান চালাই এবং তাকে গ্রেফতার করি।"

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলছিলেন, "প্রথমে চারজন শিক্ষার্থীর কথা শোনা গেলেও তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ১১ জনের কথা বলেছেন - যাদের উপর তিনি যৌন নির্যাতন করেছেন।"

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই অধ্যক্ষ জানিয়েছেন মাদ্রাসাটি কওমী মাদ্রাসার অন্তর্ভুক্ত এবং কওমী মাদ্রাসার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রও ছিল এটি।

১৯৭৮ সালের 'বাংলাদেশ মাদ্রাসা এডুকেশন অর্ডিন্যান্স' এ বলা হয়েছে বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বা অন্তর্ভুক্ত নয় এমন সব মাদ্রাসার ব্যাপারে তদন্ত করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রশাসনিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে বোর্ডের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিষয়ক বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান, যিনি মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের বিষয়ে গবেষণা করছেন, তিনি বলছেন, এবিষয়ে যে মাদ্রাসা বোর্ডগুলোর তত্ত্বাবধানের অভাব রয়েছে সেটা একেবারে পরিষ্কার।

"চূড়ান্তভাবে কিন্তু আমাদের এই মাদ্রাসা ব্যবস্থার ওপর সঠিক পর্যবেক্ষণ নেই। যথেষ্ট জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।"

তিনি বলেন, "তারা (বোর্ড) বলছে তারা তো (মাদ্রাসাগুলো) আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, আমাদের কিছু করার নেই, এই যে একটা দায় এড়িয়ে চলার প্রবণতা সেটা কিন্তু জবাবদিহিতার অভাবের উদাহরণ। তারা আসলে কোন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। এমনকি আইনে যা বলা হয়েছে সেটাও তারা মানছে না।"

সংবাদ মাধ্যমে মাদ্রাসায় এমন একাধিক ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নিতে পারছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড?

কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড যেটা 'বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ' নামে পরিচিত তার সহ-সভাপতি মুফতি ফয়জুল্লাহ বলছিলেন, মাদ্রাসার নামে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে এদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন।

তিনি বলেন, "প্রথমত এরা কী করছে সেটা দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি দেখছে আসলে এরা কারা। সেখানে কোন অনৈতিক ঘটনা হলে নিশ্চয়ই আমাদের কাছে সুপারিশ আসবে। সেই অনুযায়ী ইনশাআল্লাহ আমরা ব্যবস্থা নেব।"

কওমী শিক্ষা বোর্ড বলছে যে দুটি মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটেছে - সেগুলো বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা আইন অনুযায়ী কোন শিক্ষা বোর্ডের এসব ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই।