নিষ্পাপ দুই শিশুও যেন অনশনে, মানবিক বিপর্যয়!

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মায়ের কোলে বসে আছে ছোট্ট দুটি শিশু। আট মাস বয়সের সবচেয়ে ছোট শিশুটি কিছুক্ষণ পরপর বমি আর আর কান্না করছে। আরেকজনের বয়স তিন বছর। গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে তাদের অবস্থা নাজেহাল। শিশু দুইটি এও জানেনা তারা কেন এখানে অবস্থান করছে। নিষ্পাপ মুখ দুটি যে কারও হৃদয় গলিয়ে দেবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গত ১৬জুন থেকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। শনিবার (২০ জুলাই) তাদের আন্দোলনের ৩৫দিন হতে চলছে। শিশু দুইটি তাদের মা জোবাইদা ইয়াসমিনের সাথে এই অবস্থান কর্মসূচীতে বসে আসে।

জানা গেছে, ১৬ জুন থেকে আন্দোলন কর্মসূচী শুরু করে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক সমিতি। গত ৩ জুলাই থেকে আমরণ অনশন শুরু করে তারা। আমরণ অনশন চলাকালীন ফরিদপুর জেলা থেকে আগত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন গত ১২ জুলাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় মারা যান জাকির হোসেন। জোবাইদা জাকির হোসেনের স্ত্রী।

জোবাইদা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি তিনি যেন দ্রুত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসেন। যেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা শিক্ষকদের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা হয়। আমার স্বামী যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে মারা গেল আমি সেই দাবি বাস্তবায়নের জন্যই আমার সন্তানদের নিয়ে আন্দোলনে বসেছি।

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছোট এই সন্তান দুটির দায়িত্ব কে নেবে। আমার সংসারের দেখভাল করার মতো আর কেউ নেই। আমি এই ছোট ছোট সন্তান দুটিকে নিয়ে এখন কোথায় যাবো। তার স্বামীর জায়গায় তার একটা চাকরির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বাংলায় অনার্স, মাস্টার্স করেছি। আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হলে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে দুইবেলা খেয়ে বাঁচতে পারতাম।

বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আ স ম জাফর ইকবাল বলেন, গত ৩৫ দিনের টানা আন্দোলনের ফলে আমাদের মধ্যে ২৪৪ জন অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তাদের মধ্যে ১০জন ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত। আমাদের মধ্যে একজন মারাও গেছেন।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের কাছ থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে শুনেছেন। তার কাছে আমাদের দাবি সম্বলিত একটি ফাইল আমরা দিয়েছি। তিনি আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অনশন স্থলে এসে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা না দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।