মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যা ভাবেন শামসুল হক

আলহাজ্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা খান শামসুল হক বিএ (এসটিএস) ১৯৫১ সালের ১০ অক্টোবর গৌরনদীর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে গৌরনদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার দপ্তর ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। অবসর নিয়ে মন দিয়েছেন সমাজ সেবায়। নির্বাচিত হয়েছিলেন মাদারিপুরের শিবচড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই বীর সেনানী কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোহেল রানা

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কেমন আছেন?
বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক: আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান সরকার আপনাদের যে সম্মানী ভাতা দেয় এটাতে কি আপনারা সন্তুষ্ট?
শাসমুল হক: বর্তমানে ক্ষমতায় আছে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এই দলটিই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা দিচ্ছে। উৎসব ভাতা দিচ্ছে। সরকারী চাকরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে, নাতী নাতনিদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটা তো অনেক।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গণমাধ্যমে প্রায়ই আমরা নকল মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি দেখতে পাই। আপনি কী মনে করেন না, এই নকল মুক্তিযোদ্ধাদের ভীড়ে আপনারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা আছে, তাঁদের সম্মানহানি হচ্ছে বা জনসাধারণের কাছে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির গুরুত্বহ্রাস পাচ্ছে?
শামসুল হক: আমি বিষয়টা এভাবে দেখি না। ২০০০ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি জামায়াত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেবার ব্যবস্থা করে। তখন বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ভাতার লোভে দুনীর্তির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। সেই থেকে কিছু কিছু নকল মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় প্রবেশ করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আপনার ভূমিকা কী ছিল? অর্থাৎ আপনি সরাসরি রণাঙ্গনে? না মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারী ছিলেন?
শামসুল হক : আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করি। মেজর জলীলের নেতৃত্বে আমি মাহিলাড়া অপারেশনে সরাসরি পাক হানাদারদের সাথে যুক্ত করেছি। এই যুদ্ধে আমার এক সাথী শহীদ হয়েছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের অঞ্চলে রাজাকার বা পাক দোসরদের তৎপরতা কেমন ছিল?
শামসুল হক: গৌরনদী সরকারী কলেজ মাঠে ক্যাম্প করে পাক বাহিনী। তখন এ অঞ্চলে রাজাকার আলবদরদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাঁরা এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি চিনিয়ে দিত। আমার বাড়িতে তাঁরা তখন হানা দিয়েছিল। আমাদের বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছিল। ভাগ্য ভালো আমার মা বাবা আগেই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের এলাকায় কোন গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল কি?
শামসুল হক: বরিশালে সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয় বরিশালের ত্রিশ গোডাউনে। আমাদের এখানে গৌরনদী সদরে পদ্মার তীরের কিছু সংখ্যক গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের এলাকায় কোন বীরাঙ্গনা আছে কি ?থাকলে সংখ্যা টা কত?
শামসুল হক: একজন বীরাঙ্গনা ছিল। তাঁর নামটা সম্ভাবত ময়না বেগম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পাক সেনারা ৭১’র কোন মাসে আপনাদের এলাকায় হানা দেয় এবং কোন মাসে আপনারা পাক সেনা মুক্ত হন?
শামসুল হক: বরিশালে মুক্তিযুদ্ধ অনেক পড়ে শুরু হয়। সম্ভাবত অক্টোবর মাসের দিকে বরিশালে পাক সেনারা হানা দেয়। আমাদের গৌরনদী কিন্তু একটু দেরিতেই স্বাধীন হয়। ২২ ডিসেম্বর গৌরনদীর শত্রুমুক্ত হয়েছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে আপনাদের উপজেলায় কত জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন? কত জন জীবিত আছেন?
শামসুল হক: গৌরনদী উপজেলায় প্রায় ৯০০ জন নিবন্ধিত মুক্তি্যোদ্ধা রয়েছেন। এদের মধ্যে জীবিত আছেন ৫০০ জনের মত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জাতীয় দিবসগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোন আলোচনা সভা বা পদক্ষেপ নেন কি?
শামসুল হক: জাতীয় দিবসগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ দিবসগুলোতে আমাদের একটা পূর্ণমিলনী হয়ে থাকে আর কি। তাছাড়া আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। অন্যদের নিয়ে করা হয় না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে সরকার চাকুরিতে কোটা প্রথা বাতিল করেছে। এতে ৩০% মুক্তিযুদ্ধ কোটাও বাতিল করেছে। এটা নিয়ে আপনারা কোন আন্দোলনে যাবেন কিনা?
শামসুল হক: মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবীতে আমরা ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ গঠন করেছি। অচিরেই আমরা আন্দোলনে যাবো। তাছাড়া দেশনেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা যে বিশেষ শ্রেণির কথা বলেছে। আমরা মনে করি এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করবেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনাকে।
শামসুল হক : আপনাকেও ধন্যবাদ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।