নামাজ পড়াতে এসে মসজিদেই অভিনব ধর্ষণ ইমামের!

জোহর নামাজের সময় তখনও হয়নি। মসজিদের রুম-বারান্দ ঝাড়ু দিচ্ছিলেন ইমাম হাফেজ নুরুল আমিন। পথিমেধ্যেই সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন সাত বছরের শিশু সামিয়া (ছদ্মনাম)। কে জানত একটু পরেই সামিয়ার সঙ্গে এমন সর্বনাশটা হতে চলেছে!

ঘটনাটি কক্সবাজারের উখিয়ায়। এখানেই অভিনব এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মসজিদের ভেতরে ঘটনাটি ঘটলেও গত কয়েকদিন ধরেই তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে ১ লাখ টাকা জড়িমানাও হয়েছে ধর্ষক ইমামকে। যদিও সেটিও না দিয়ে পালিয়েছে সে।

পুলিশ সূত্র জানায়, উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার মসজিদের ভেতরে শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশুটি ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে ডেইলপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ নুরুল আমিন মসজিদ ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে মসজিদের ভেতরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন।

শিশুটি পরে মসজিদ থেকে কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের ঘটনা জানায়। তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের শরণাপন্ন হলে তিনি সালিস করে ইমামকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন, কিন্তু ততক্ষণে ধর্ষক ইমাম পালিয়ে যান। শিশুটি ওই ইমামের কাছে সকালবেলা আমপারা শিক্ষা নিত।

উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার ও উপপরিদর্শক মিল্টন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদের ভেতর এক শিশুকে ধর্ষণের খবর পেয়ে ধর্ষককে আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালালেও মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনকারী ওই ধর্ষক পালিয়ে যান। রাতেই ধর্ষণের শিকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। পরে ধর্ষক হাফেজ নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণে ১৪জন 
এদিকে একই জেলায় ধর্ষণের আরেকটি ঘটনা ঘটেছে মহেশখালী দ্বীপে। কালারমার ছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায়। এক চাকরিজীবী তরুণীকে অপহরণের পর ১৪ বখাটে তাঁকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এই বর্বর ঘটনা গত ৭ জুলাই ঘটলেও গত পাঁচ দিন ধর্ষিতাকে অবরুদ্ধ করে রেখে ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় প্রভাবশালী ধর্ষকের দল ও স্থানীয় কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। শুক্রবার খবর পেয়ে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে।

অন্যদিকে মহেশখালী দ্বীপে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী চট্টগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর মা থাকেন মাতারবাড়ীতে। মাকে দেখার জন্য তিনি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭ জুলাই সন্ধ্যায় মহেশখালী দ্বীপে এসে কালারমার ছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় দুর্বৃত্তের কবলে পড়েন।

কালারমার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার লিয়াকত আলী বলেন, ওই গ্রামের ১১ যুবক এবং মাতারবাড়ী এলাকার তিন যুবক ওই তরুণীকে জবরদস্তি চালিয়াতলী পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে পাহাড়ের একটি ঘরের বাসিন্দাদের বের করে দিয়ে এই ১৪ দুর্বৃত্ত বখাটে সারা রাত ধরে পালাক্রমে তাঁকে ধর্ষণ করে।

পরদিন সকালে স্থানীয় নারী ইউপি মেম্বার খতিজা বেগম ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষিতাকে মাতারবাড়ীতে অন্য নারী মেম্বার শামীমার বাড়িতে পৌঁছে দেন। সেখানে ওই তরুণীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ফাঁকে ধর্ষকের দলটি ইউপি মেম্বারদের ঘিরে ঘটনা পুলিশকে না জানানোর জন্য চাপ দেয়। সেই সঙ্গে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে ধর্ষিতাকে ইউপি মেম্বারের ঘর থেকে বাইরে যেতে বাধা দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ধর্ষকদের হুমকি-ধমকির মুখে চুপচাপ থাকতে বাধ্য হন।

অবশেষে ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে গতকাল বিকেলে মহেশখালী থানার একদল পুলিশ মাতারবাড়ী গিয়ে নারী মেম্বার শামীমা বেগমের ঘর থেকে গণধর্ষণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই সঙ্গে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় মেম্বার শামীমা বেগমকেও। মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদুল্লাহ জানান, তিনি গতকালই ঘটনাটি শুনেছেন।

মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ইউপি মেম্বার লিয়াকত আলী তাঁর স্থানীয় অফিসে গত বুধবার ধর্ষকদের নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য বৈঠক করেন। মেম্বার ধর্ষক ১৪ জনের কাছ থেকে টাকাও নেন ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় জড়িত তিন ইউপি মেম্বারের মধ্যে শামীমা বেগম হচ্ছেন ধর্ষিতার আশ্রয়দাতা। তিনি ধর্ষিতাকে সঙ্গে নিয়ে গত রাতে থানায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ওসি জানান, লিয়াকত আলী মেম্বার ধর্ষকদের নাম-পরিচয় পুলিশকে জানাতে চাননি। তিনি পালিয়ে গেছেন। অন্য নারী মেম্বার খতিজা বেগমও ধর্ষকদের রক্ষার জন্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে কাজ করেছেন। এমনকি এই দুই মেম্বার তরুণীকে থানায় না যাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালান। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার তৎপরতায় দুই ইউপি মেম্বার লিয়াকত আলী ও খতিজা বেগম পুরোপুরি জড়িত থাকার বিষয় নিশ্চিত করলেও তাঁদের আসামি করা হবে কি না ওসি তা জানাননি।

ওসি প্রভাষ চন্দ্র আরো জানান, ধর্ষিতা ঘটনার সময় একে অন্যকে ডাকাডাকির মধ্যে তিনজনের নাম জানতে পেরেছেন। তারা হলো ওসমান, আদালত খাঁ ও কামাল। তবে পুলিশ ধর্ষকদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানতে পেরেছে। তারা হলো মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী গ্রামের মৃত আবুল হাছির ছেলে আমির সালাম, মোসতাক আহমদের ছেলে এনিয়া, স্থানীয় নলবিলা দরগাহপাড়ার মোকতার আহমদের ছেলে আদালত খাঁ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ওসমান গনি। ঘটনায় জড়িত অন্যদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।