জাবিতে আঞ্চলিক ইতিহাস অলিম্পিয়াড

‘নিজের শেকড়কে জানো, নিজেকে সমৃদ্ধ করো’ স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রথম বারের মতো আঞ্চলিক ইতিহাস অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংগঠন মুক্ত আসরে’র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটি এই অনুষ্ঠানে আয়োজন করে। শুক্রবার সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এ অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়।

এসময় বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কমিটির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল ভূইয়া। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য আশফাকুজ্জামান ও মাহমুদ ইকবাল প্রমুখ।

এরপর সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লিখিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা উত্তর, সাভার, ধামরাই, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার ৩০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ‘চারশ’ শিক্ষার্থী প্রতিযোগীতার পরীক্ষায় অংশ নেয়।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিনের সংগ্রামে গড়ে তোলা ইতিহাস একটি জাতির পরিচয়কে তুলে ধরে। বাঙালি জাতি ইতিহাসে সেই পরিচয়ের জায়গাটা গড়ে তুলেছে। যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। বাঙালি যেখানেই যাক না কেন, বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে, বাঙালি সংস্কৃতির সবটুকু ধারণ করেই তাঁকে থাকতে হবে। তা নাহলে মানুষের যে মর্যাদা তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সেলিনা হোসেন আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। যা বাঙালিকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে। তাই নিজের পরিচয়ের প্রশ্নে তোমরা কখনোই নিজেকে ক্ষুদ্র মানুষ মনে করবে না। তোমরা ইতিহাস যখন জানবে, জীবনের সত্যকে যখন জানবে, তখন মর্যাদার সঙ্গে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করে তুলতে সমর্থ হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এমরান জাহান বলেন, ‘ইতিহাস একটি জাতির গৌরব। দেশ, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, লোকসংস্কৃতি- এসব মিলেই ইতিহাস। নিজের শিকড়কে জেনে নিজেকে সমৃদ্ধ করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেজন্য ইতিহাসের চর্চা থাকতে হবে। এ ধরনের আয়োজন সে পথকে সুগম করে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, ‘মানুষকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হলে নিজের শেকড়ের ইতিহাস জানতে হবে। জানতে হবে প্রোমিথিউসের ইতিহাস, কেন তিনি সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিলেন।’ এসময় চারটি ক্যাটাগরিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শীর্ষ ১০ জন করে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।