প্রেসক্লাবে ফের আন্দোলনে ৩৫ প্রত্যাশীরা

ফের আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ প্রত্যাশীরা। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪ টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ৩৫ চাই আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। এখানে থেকে তারা আবারও সরকারের প্রতি তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে যোগ দিয়েছেন।  

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের মুখপাত্র ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা সম্পূর্ণ নয়। তিনি আংশিক তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ে এখনো সেশনজট রয়েছে। তাদের কিন্তু পাস করে বের হতে আরও বেশি সময় লাগছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেসরকারি চাকরিতেও ৩০ বছরের পর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। আমাদের দাবি সেখানেও যেন বয়সসীমা উঠিয়ে দেয়া হয়। ৩০ এর বাধ্যবাধকতা থাকায় আমরা অনেক মেধাবীদের হারাচ্ছি। তারা বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে মেধার পাচার হচ্ছে। সরকারের অবশ্যই এইদিকে নজর দিতে হবে।

এসময় তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে তাহলে আরও কঠিন আন্দোলন যেতে বাধ্য হবো। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এরপরও যদি আমরা সফল না হই তাহলে জনসমর্থন নিয়ে বৃহৎ আন্দোলনে যাওয়া হবে।

আর আগে সোমবার (৮জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলন সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বলেননি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে তিনি বলেছেন, ৩৫ দাবিতে আন্দোলন করলে করুক, সমস্যা নেই। আন্দোলন যে কেউ করতেই পারে, আন্দোলন করলে তো আমি বাঁধা দিতে পারব না। তাছাড়া আন্দোলন করলে অন্তত রাজনীতিটা শিখবে। কিন্তু কারো প্ররোচনায় পড়ে যদি আন্দোলন করে, তবেই বুঝতেই পাচ্ছেন, অবস্থাটা কী হবে? এছাড়া তিনি বিগত পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেন। আর দেশবাসীকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেন। ৩৫ প্রত্যাশীরা আশা করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক মন্তব্য করবেন। তাদের এই আশাভঙ্গ হওয়ায় নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেয়।

টানা কয়েক বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া। তারপরও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছেন আন্দোলনকারীদের সংগঠক ফেরদৌস জিন্নাহ লেলিন, সঞ্জয় দাসসহ আরও অনেকে।

জানা গেছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখলেও এখনো চলছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে গ্রেফতারের ঘটনাও। এরইমধ্যে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিলো।

তবে সেই দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৫ চাই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তবে সংসদে নাকচ হয়ে যাওয়ায় নতুন কর্মসূচিতে সরকারের বাঁধা আসতে পারে বলে আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অনেকে মনে করছেন। তবে এতে তারা বিচলিত নন বলেও জানিয়েছেন।

গত ২৫ এপ্রিল চাকরি প্রত্যাশীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে ওঠে। তবে তা নাকচ করে দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করার পর একজন ছাত্র অন্তত সাত বছর সময় পেয়েছে। এটা অনেক সময়। তাছাড়া এর আগে চাকরির বয়স ২৫ বছর ছিল, সেখান থেকে ২৭ ও পরবর্তীতে ৩০ বছর করা হয়। সে হিসেবে এখন বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।

এ সময় তিনি প্রস্তাব উত্থাপনকারী সংসদ সদস্যকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানান এবং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু সেটি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়। কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। মূলত প্রস্তাবটি পাস না হওয়াতেই তীব্র হতাশ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।