বাংলা কবিতার রাজপুত্র কবি আল মাহমুদের জন্মদিন আজ

বরেণ্য কবি আল মাহমুদের ৮৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আল মাহমুদ সমকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি। তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।

আল মাহমুদের জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় ও তার জন্মভিটায় পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও কবির সহলেখক আবিদ আজম জানান, কিংবদন্তি এ কবির জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর কাটাবনের কবিতা ক্যাফেতে (২৩৪/সি নিউ এলিফ্যান্ট রোড, কাটাবন সিগন্যাল, ঢাকা) বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় ‘আল মাহমুদ উৎসব’র আয়োজন করা হয়েছে। এতে কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, কবি জাহিদুল হক ও কবি শাহীন রেজাসহ কবির ভক্ত-অনুরাগীরা উপস্থিত থাকবেন।

অন্যদিকে কবির জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইলে সকালের দিকে স্মরণানুষ্ঠান ছাড়াও কবির কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলী ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক কবি মহিবুর রহিম। এছাড়া আল মাহমুদ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনা ছাড়াও কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহৎ পরিসরে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। আল মাহমুদের পরিবার কিংবদন্তী এ কবির জন্মদিন উদযাপনে ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে মরোণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেবার দাবি জানিয়েছেন।

পঞ্চাশের দশকে আবির্ভূত সাহিত্যের সব্যসাচী কবি আল মাহমুদ কবিতা ছাড়াও লিখেছেন উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, আত্মজীবনী ইত্যাদি। এযাবৎ তার প্রকাশিত শতাধিক গ্রন্থ নিয়ে প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ মোট ১৩ খণ্ডে প্রকাশ করেছে ‘আল মাহমুদ রচনাবলি’। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় আল মাহমুদের প্রথম কবিতার বই ‘লোক লোকান্তর। এর তিন বছর পর ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় তার আরও দুটি কবিতার বই ‘কালের কলস ও ‘সোনালী কাবিন’। এর মধ্যে ‘সোনালী কাবিন’ তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। এ ছাড়া তার ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’, ‘একচক্ষু হরিণ’, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।

‘কাবিলের বোন’, ‘উপমহাদেশ’, ‘ডাহুকি’, ‘আগুনের মেয়ে’, ‘চতুরঙ্গ’ ও ‘পোড়ামাটির জোড়া হাঁস’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘পানকৌড়ির রক্ত’সহ বেশ কিছু গল্পগ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘যেভাবে বেড়ে উঠ’ তার উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের লিফলেটে কবিতা ছাপা হবার কারণে ফেরারী হওয়া আল মাহমুদ একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে মুজিবনগর সরকার স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। নিজের প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা রচনা করে গেছেন কালজয়ী দুটি উপন্যাস কাবিলের বোন ও উপমহাদেশ।

সৃজনশীল সাহিত্য রচনার জন্য অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আল মাহমুদ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮), জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯০), সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক-২০০৪ সম্মাননা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির কারণে আল মাহমুদ জীবনব্যাপী মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন কোন স্বীকৃতিই তার সঙ্গে তুল্য নয়।