রিকশা চালান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, পাশে দাঁড়ালেন রাব্বানী

রাজধানীর লালবাগ থানার অন্তর্গত ২৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন জাকির হোসেন। তবে তার জীবন আর দশটা রাজনীতিবিদের মতো নয়। জীবন-জীবিকার টানে তিন চাকার রিক্সা চালান তিনি। আর এ নিয়ে তোলপাড় পড়ে গেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। ছাত্রলীগের একজন নেতার এমন অসহায় অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না তারা। তবে জাকির হোসেনের পাশে দাড়িয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

জাকিরকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রলীগের অনেক নেতা। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা তার ছবি ফেসবুকে দিয়ে লিখেছেন, ‘এর নাম জাকির হোসেন। লালবাগ থানার অন্তর্গত ২৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনীত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। জীবন জীবিকার টানে তিন চাকার রিক্সা চালাক।

তার চেহারায় আছে একটা মায়াবিভাব, আর রিক্সা চালানোর রয়েছে গতিময় ছন্দ, পায়ে রিক্সার পেডেল মারে আর মানুষকে সতর্ক করার জন্য হাত দিয়ে রিং বাজিয়ে টুংটাং শব্দ করে, রিক্সার টিংটাং শব্দের তালে তালে রাজনীতি করে গড়ে তোলা অট্রালিকার দিকে মিটমিট করে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ক্ষণে ক্ষণে ছাত্রলীগের মিছিলের দিকে তাকিয়ে ভাবে--- কেনইবা এ পথে এসেছিলাম, কেনই ভবের জগতের উদাহরণ হলাম।

আমি যদি আমারই হতাম, টিংটাং পেডেল হয়তো না মারতাম। ভবিতব্যে এ সৎ পথে আরো অনেক আগামীকে সুস্বাগতম---- মহৎ পেশা কাউকে ছোট করে না, তবে রাজনীতি ধরে রেখে রিক্সা চলার তালে তালে সামনে এগিয়ে যেও জাকির হোসেন ভাই। স্যালুট: জাকির হোসেন, সাবেক সভাপতি, ২৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ।’

এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এইচ এম আল আমিন আহমেদ লিখেছেন, ‘সারাদিন রাফসানের ছবি ফেবুতে দেখেছি, অনেকেই আমাকে ট্যাগ করেছে, নাম মেনশন করে মন্তব্য করেছে যেন গোলাম রাব্বানীকে বিষয়টি অবহিত করি, কিন্তু আমি কিছুই করিনি! কারণ আমি জানি, রাব্বানীর নজরে বিষয়টা আমি না জানালেও আসবে, আর সে ঠিকই ছাত্রলীগের রাফসানের পাশে দাঁড়াবে এবং তাই হয়েছে দিনশেষে রাব্বানী অসহায় ছাত্রলীগ নেতা রাফসানের পাশে দাড়িয়েছে।

রাফসান ঢাকার একটি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েও রিক্সাচালক! বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হ্নদয় বিদারক!আমরা অনেকেই জানি ঢাকার একেকটি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনেক ক্ষমতা, অনেকেই অনেক টাকার মালিক। শুধু আওয়ামীলীগ নয়, ঢাকায় এমন ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নাই যারা দল করে কোটিপতি হয়নি!

তাহলে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির কেন রিক্সা চালাতে হবে!? শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা তো দুরের কথা কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের অনেক নেতার জীবন একটা অভিশাপে পরিনত হয়েছে ছাত্রলীগ করে! ছাত্রলীগের উপজেলা, জেলা কমিটির শতকরা ৮০% এর উপরে হবে যারা সাধারণ জীবন-যাপন করার অর্থের ব্যবস্থা করতে পারেনি!

কিন্তু বাংলাদেশের কোন উপজেলা, জেলা, কেন্দ্রীয়, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের একজন সভাপতি সাধারন সম্পাদক কি দেখাতে পারবেন কোটিপতি ছাড়া!? তাহলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কেন এত অবহেলা!?ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের যদি এতো বাজে অবস্থা হয় তাহলে বাকি নেতা-কর্মীদের কত করুন অবস্থা!? আপনারাই বলুন!?

বাংলাদেশে কোন এমপি মন্ত্রী, কোন উপজেলা, জেলা আওয়ামীলীগের, যুবলীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদক বলতে পারবেন, ছাত্রলীগ আর পুলিশ ছাড়া পাঁচ মিনিট বিরোধীদল, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে পারবেন!? আমি জানি ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রলীগ-পুলিশ ছাড়া কারো গায়ে জামা থাকবেনা! অথচ তিনবার দল ক্ষমতায়, সারা দেশে ছাত্রলীগের খাবার নাই, চাকরি নাই, জীবনের নিরাপত্তা নাই!

ছাত্রলীগ একটি আবেগের সংগঠন, এই সংগঠন যারা বঙ্গবন্ধু আর তার কন্যাকে ভালবেসে আবেগ দিয়ে করেছে তারাই যুগে যুগে অভিশপ্ত জীবন লাভ করেছে! ভালো আছে কিছু নামধারী আদর্শহীন ছাত্রলীগ। আজকে গোলাম রাব্বানী আছে, তাই গোলাম রাব্বানী এগিয়ে আসে, কাল রাব্বানী থাকবেনা তখন তাদের কি হবে!? একজন গোলাম রাব্বানী কত হাজার ছাত্রলীগ কে ভালো রাখবে!?

ছাত্রলীগকে দেখার দায়ীত্ব আওয়ামীলীগের, এমপি মন্ত্রীদের, কিছু জেলা-উপজেলা ছাড়া, ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রলীগের আবেগকে শুধু ব্যবহারই করা হয়! তাদের প্রাপ্য সম্মান তো দূরের কথা, মানবিক আচরণটুকুও করা হয়না! তাই এসব খবর আমার রাব্বানীর কাছে পৌছাতে মন চায়না! রাব্বানীর হাতে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে বসেনি।

তবুও রাব্বানী যেভাবে ছাত্রলীগ, কৃষক, শ্রমিক, সাধারন মানুষের পাশে খবর পাওয়া মাত্র পাশে দাঁড়ায়, অতীতে কখনো কোনদিন কাউকে এভাবে দেখিনি! ছাত্রলীগের সাবেক একজন কর্মী হিসেবে রাব্বানীকে অভিবাদন জানাই, যতটুকুই সম্ভব রাব্বানী করে। ভালো থাকুক গোলাম রাব্বানী, ভালো থাকুক আবেগ ভালোবাসার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’