লন্ডনের বর্ষসেরা শিক্ষক সিলেটের আবিদ

আবিদ আহমেদ

সিলেটের স্থানীয়রা তাকে তোতলা বলে খ্যাপাত। তোতলামির কারণে ছোটবেলায় ক্লাসে পড়া বলতে চেয়েও পারতেন না আবিদ। এসময় আবিদকে নিয়ে মজা করতো। সিলেটের সেই ছোট্ট ছেলে আবিদ আহমেদ আজ বড় হয়ে যুক্তরাজ্যের দেশসেরা শিক্ষক। জয় করে নিয়েছেন কথা বলার সেই প্রতিবন্ধকতা। শুধু তাই নয়, এখন তার কথা শুনতে কান খাড়া করে থাকে ক্লাসের শত শিক্ষার্থী।

যুক্তরাজ্যের টিইএস-টাইমস এডুকেশন সাপ্লিমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আবিদ আহমেদ। ব্রিটেনের ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের আয়োজনে সম্প্রতি তাকে নতুন শিক্ষক ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরার এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দেশসেরা শিক্ষকদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম এসেছিল আবিদের।

আবিদ জানান, তার ছেলেবেলার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন। বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিন বছর আগে শিক্ষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। এবার হলেন যুক্তরাজ্যের সেরা শিক্ষক।

লন্ডনের নিউম্যান ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রীড়ায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে টিচার্স ট্রেনিংয়ে ভর্তি হন আবিদ। সেখানে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণের পর আবিদ বার্মিংহামের বাংলাদেশি অধ্যুষিত লজেলস এলাকার হলটি স্কুলে গণিত বিষয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পান। এরআগে একসময় নিজেও এ স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি।

গণিতে শিক্ষকতার পাশাপাশি আবিদ স্কুলের তোতলা বা কথা বলতে সমস্যা হয় এমন শিক্ষার্থীদের জন্য সাপোর্ট গ্রুপ চালু করেন। গত বছর আবিদ শুরু করেন বিবিসি থ্রি ডকুমেন্টারি সিরিজ ‘অ্যামেজিং হিউম্যান’। এ ডকুমেন্টারিতে উঠে আসে আবিদ কীভাবে তোতলা শিশুদের জন্য গণিতের ক্লাস পরিচালনা করেন, কীভাবে তার ক্লাসগুলো উদ্দীপ্ত করে তোতলা শিক্ষার্থীদের। বিশ্ব তোতলা দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল স্টামার অ্যাওয়ারনেস ডের জন্য তার তৈরি ভিডিওটি প্রশংসিত হয়। আর এসব কর্মকাণ্ডই তাকে এনে দেয় দেশসেরা শিক্ষকের পুরস্কার।

আবিদ জানান, তিনি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পেরে তার কাঙ্ক্ষিত পেশায় আসতে পেরেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, শারীরিক অক্ষমতা কোনো বাধা নয়। তিনি স্টামারদের নন, সব কম সক্ষম মানুষের প্রেরণা হতে চান।