ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিতর্কিত প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যক্ষসহ পাঁচজনকে ও অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির যে কোনও নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিতর্কমুক্তভাবে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কমিটিকে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল দুর্নীতির অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র অধ্যাপক শাহেদুল খবির গত মার্চে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে বদলি হয়ে আসেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনও পরিচালককে বেসরকারি কলেজের নিয়োগ কমিটিতে আজীবন নিষিদ্ধ করার ঘটনা এটাই প্রথম বলে শিক্ষাখাতে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগের কমিটিতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, শিক্ষা অধিদপ্তর কলেজ প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা।

জানা গেছে, ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া দুদকের উপ-পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের স্ত্রী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে নিয়োগ দিতে চেয়েছিল সদ্য বিদায়ী নির্বাচিত গভর্নিং বডি। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় ৩০ নম্বরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ পান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফা। প্রার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিতে চেয়েছিল বিদায়ী গভর্নিং বডি।

রুমানা শাহীন শেফাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে। কমিটিতে গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, মাউশির পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা ছিলেন। ২৭ এপ্রিল সকালে লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হয়।

নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। মোট ১০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়, যিনি লিখিত পরীক্ষায় মাত্র সাড়ে ৩ নম্বর পেয়েছেন। তবে মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় প্রথম করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।

লিখিত পরীক্ষায় ফেল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্স মিলিয়ে রুমানা শাহীন শেফাকে ১৯ নম্বর দেয় নিয়োগ কমিটি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা যথাক্রমে সাড়ে ১৮ ও ১৮ নম্বর পেয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম পেয়েছেন ১৭।

এ ঘটনা জানাজানি হলে গত ২ মে সংবাদ সম্মেলন করে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং বিতর্কিত পরিচালনা কমিটির এজেন্ডা বাস্তবায়নে জড়িত মো. শাহেদুল খবিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা। সব অনিয়ম দূর ও শাহেদুলের শাস্তি দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রীরও হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।