বুয়েটের মেহেদি: ফেসবুক যাকে খুঁজে চাকরি দেয়

ভবিষ্যতে প্রযুক্তি খাতে ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করতে চাই। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এখন উন্মুক্ত হয়েছে বিশ্বসেরা সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ। নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে এভাবেই এগিয়ে যাওয়া যায়— কথাগুলো মেহেদী বখতের। তিনি বাংলাদেশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ২০১২ সালে ফেসবুকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

মেহেদী বখত ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জায়েদ বখত একজন অর্থনীতিবিদ এবং মা হালিমা জায়েদ গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী। মীর্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১১তম এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় হন তিনি।

এরপর বুয়েটে কম্পিউটার কৌশল বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। মেহেদী বখত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়ার সময় দুইবার এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইসিপিসি) চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়েছিলেন। পরে বুয়েট থেকে স্নাতক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা-ক্যাম্পিংয়ে (ইউআইইউসি) পড়তে যান। এখান থেকেই নেটওয়ার্কিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ফেসবুক জয় করার গল্প: ‘পড়াশোনা শেষ করে ২০১১ সালের শেষ দিক থেকেই চাকরি খোঁজা শুরু করি আমি। সে সময় ফেসবুক এতটা বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেনি। তাই চাকরির জন্য গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট, লিংকড-ইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে চেষ্টা করতে থাকি।’— বলেন মেহিদী। এরই মধ্যে ফেসবুক থেকে একদিন যোগাযোগ করা হয় তার সঙ্গে। তারা জানতে চায় ফেসবুকে কাজ করতে মেহেদীর আগ্রহ আছে কি না। আগ্রহী হলে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন।

মেহেদী বলতে থাকেন, ‘ভেবে দেখলাম, সাক্ষাৎকার দিতে তো সমস্যা নেই। একাধিক পর্বে ফোন-সাক্ষাৎকার দিয়ে শেষে দিলাম “অনসাইট ইন্টারভিউ”।’ দুই সপ্তাহের মধ্যে মেহেদীর ডাক এল ফেসবুক থেকে। সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিলেন ফেসবুকের ‘মেসেজেস’ দলে। ‘চ্যাট প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামেও পরিচিত এ বিভাগ। ফেসবুকের মানবসম্পদ বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্ব থেকে সন্ধান পান মেহেদীর। মেহেদী বলেন, ‘ফেসবুকের পরে আমার যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ ছিল, সেগুলোর প্রায় সবগুলো থেকেই ভালো পদে চাকরি করার সুযোগ পেয়েছিলাম।’

ফেসবুকে কাজ করে বেশ খুশি মেহেদী। জানালেন, ‘ফেসবুক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে আমরা যে কাজটি করি, সেটি সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যায়। কাজের পরিবেশও চমৎকার। যাঁদের সঙ্গে কাজ করছি, সেই মেধাবী সহকর্মীদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়।’

প্রায় তিন বছর তিনি ফেসবুকে মেসেজেস টিমে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ভ্যারিফ্লো নামক একটি প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি খাতে ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করতে চান মেহেদী বখত।

মেহেদী জানালেন, ফেসবুক, গুগল, টুইটার, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানে কে কোন প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষ, সেটি বড় কথা নয়। বরং প্রাথমিক সমস্যাগুলো সমাধানের যোগ্যতা কার কেমন রয়েছে তাঁর ওপর নির্ভর করে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়। ‘এসব ক্ষেত্রে নতুন যাঁরা আসতে আগ্রহী, তাঁদের গণিত অলিম্পিয়াডের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দরকার, যতটা সম্ভব প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা।

বাবা অর্থনীতিবিদ জাহিদ বখত ছেলের এমন সফলতার ব্যাপারে জানান, ‘এটা অভিভাবক হিসেবে বেশ ভালো লাগার খবর। বাংলাদেশি এসব তরুণ বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করার পাশাপাশি দেশের স্বার্থের বিষয়গুলোও দেখছে।’

পড়ুন: ভাগাভাগি মেলাতেই শোভন-সনজিত সিনেট সদস্য!