নোয়াখালী

হাসপাতালের ধসে পড়া ভবনে চলছে চিকিৎসা

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী সদর হাসপাতালের সেবা নোয়াখালীর মানুষের জন্য কতটা উপকার বয়ে আনছে? কিছু ‍কিছু ক্ষেত্র বিবেচনা করলে মনে হয় এটি জন-মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে আছে। নেই কোন ভালো রোগী ব্যবস্থাপনা, ভালো কোন দালান, নেই কোন মর্গ, চারদিকে দালালের হুঙ্কার। তার উপরে রোগীরা থাকতে হয় ভয়ে কখন দেয়াল খসে পড়ে। আর তাদের এই ভয়ই সত্যি হলো আজকে।

গতকাল ১২ জুন, বুধবার সকালে নোয়াখালী সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তারা খসে আট শিশুসহ ১০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় আহতরা হলেন কবিরহাট উপজেলার নলুয়া গ্রামের ইব্রাহিম (৫০), সুমাইয়া (১২), ইসমাইল (৫), সদর উপজেলার মনসাদপুর ইমাম উদ্দিন (৫), সোনাপুরের পারুল বেগম (৪৭), সুবর্ণচর উপজেলার রাসেল (১৬), সাদ্দাম (৩৫) ও রাফি (২)।

এটিই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৮ সালের ১২ জুলাই হাসপাতালের পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ওয়ার্ডের ছাদ ধসে দুই নার্স আহত হয়েছিলেন। বারবার এই রকম ঘটনা ঘটার পরও কর্তৃপক্ষ কোনরূপ পদক্ষেপ নেয় নি। বরং ঝুঁকিপূর্ণ এইসব বিল্ডিংই চালাচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার এমন খবর প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ কোনরূপ পদক্ষেপ দিচ্ছে না। এমনিতেই হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। রোগীদেরকে মেঝেতে ফেলে রাখার বিভিন্ন চিত্র বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল হয়। তবু এক পেশী কিছু দালাল চক্রের কাছে জিম্মি থাকে যায় রোগীরা।

এই সব কিছুর পরও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। এখন এই রকম বারবার দালানের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ার কারণে তাদের মাঝেও ভয় কাজ করছে। শঙ্কায় আছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরা। এইভাবে যেকোনো সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়ে ভুক্তভোগীরা।

এরআগে ২০১৫ সালে নোয়াখালীর গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালী সদর হাসপাতালের তিনটি ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তারপরও এই পরিত্যক্ত ভবনেই পরিচালিত হচ্ছিল শিশু ওয়ার্ডসহ আরো কয়েকটি ওয়ার্ড। ২০০৮ সালে থেকে এই শিশু ওয়ার্ডের খসে পড়া শুরু হয়। তারপরও এই ভবনেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অপ্রতুল জায়গার অভাবেই এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ দালানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা নিয়ে সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

কিন্তু জন-মনে প্রশ্ন উঠে, এত বড় জেলার সদর হাসপাতালটির এত কম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কেন? কেন বাড়ানো হচ্ছে না বেডের সংখ্যা। জননেতা নুরুল হক হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতাল এখনও কাজ শুরু হয়নি।ফলে আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এখনও এই সদর হাসপাতালেই ইন্টার্ন ও চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

ভুক্তভোগী স্থানীয়দের দাবি, অচিরেই নোয়াখালী সদর হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বন্ধ করে নতুন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে মানুষের সেবার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখবে। যার মাধ্যমে হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ফিরে আসবে।