বশেমুরবিপ্রবিতে এক মাসেই ১৯ শিক্ষার্থীকে শোকজ নোটিশ!

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং শোকজ নোটিশ প্রদান যেনো একটি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিককে বাকস্বাধীনতার অধিকার দেয়া হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেই অধিকার প্রযোজ্য হয় না বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। কোনো যৌক্তিক বিষয়ে সমালোচনা করলে কিংবা কোনো ন্যায্য দাবি জানালেই শাস্তি ভোগ করতে হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, কেবলমাত্র মে মাসেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করেছে ১৯ জন শিক্ষার্থীকে। এছাড়া সাময়িক বহিষ্কার করেছে একজনকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোনো ধরণের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই কেবল শিক্ষার্থীদের মাঝে ভয়-ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এসকল শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করা ১৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজনকে ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রদান ও নিউজ শেয়ার করার জন্য গত ৯ মে নোটিশ প্রদান করা হয়।

একই কারণে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয় একজন শিক্ষার্থীকে। প্রশাসনের অভিযোগ ছিলো বশেমুরবিপ্রবির সিএসই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন ওই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন স্টাটাস প্রদান করেছেন।

তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কোনো ধরনের অশালীন স্ট্যাটাস দেননি। তারা শুধুমাত্র আক্কাস আলীর স্থায়ী চাকরিচ্যুতির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন এবং আন্দোলন বেগবান করতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস প্রদানসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও কলাম শেয়ার করেছিলেন। তাদের দেওয়া স্ট্যাটাসে তারা কোনো অশালীন শব্দ ব্যবহার করেননি, তারা শুধু আক্কাস আলীকে স্যার সম্বোধন করেননি।

শোকজ নোটিশপ্রাপ্ত অবশিষ্ট ১৪ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে মানববন্ধন করায় এবং সরকারবিরোধী প্ল্যাকার্ড বহন করায় ৩০মে শোকজ নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা কেবলমাত্র সরকারের নিকট ধানের ন্যায্যমূল্য দাবি করেছিলেন।

এদিকে প্রশাসনের এধরণের স্বৈরাচারী আচরণে ভয়ের মধ্যে দিন কাটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের মতে, তারা অন্যায় দেখলেও চুপ করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এবং যৌক্তিক আন্দোলন করতেও ভয় পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘যেকোনো ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ন্যূনতম বাক স্বাধীনতাও নেই। কোনো যৌক্তিক সমালোচনা করলে বা দাবি জানালেই বহিষ্কার অথবা একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। আর প্রশাসনের হাতে অসীম ক্ষমতা থাকায় আমরাও চুপ থাকি। ক্রমাগত কাঠের পুতুলে পরিণত হচ্ছি আমরা। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা ঘুমের মাঝেও শোকজের দুঃস্বপ্ন দেখি।’

এসব শোকজ নোটিশ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ নুরুদ্দীন আহমেদ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হলেও প্রতিটি নোটিশের ক্ষেত্রেই তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেবল বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী নোটিশ প্রদান করে থাকেন।

এ বিষয়ে শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভুঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমারা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, তাদের কিসে ভালো হবে কিসে খারাপ হবে সেটাতো আমরা ভালো বুঝি। যদি রাত একটায় কোনো ছেলেকে নদীর পাড়ে গিয়ে গান গাইতে বাঁধা দেয়াটা বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয় তাহলে সেটা বলতে পারেন।’

শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পোস্টের কারণেও শোকজ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গুটিকয়েক শিক্ষার্থী শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে বিভিন্ন কাজ করে থাকে এবং তারা ১২ হাজার শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করেই এ ধরণের ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।’ তিনি দাবি করেন, বশেমুরবিপ্রবিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্লাস হয় এবং এখানে যে পরিমাণ এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস হয় তা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না।