শুধু প্রাথমিকে কেন বায়োমেট্রিক— ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষকরা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চালু হচ্ছে ‘বায়োমেট্রিক হাজিরা’। এর ফলে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করা যাবে। হাজিরার বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন। শুধু প্রাথমিকে এই পদ্ধতি চালু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

চলতি মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে হাজিরা যন্ত্র (ডিভাইস) বসানো হবে বলে জানা গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরের নামী মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে অনেক আগেই বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হয়েছে অনেক আগেই।

এদিকে বায়োমেট্রিক হাজিরার বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সহকারি শিক্ষকরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি ছিল ১১তম গ্রেড। কিন্তু তা দিয়ে উল্টো একের পর এক নিয়ম চাপানো হচ্ছে; যা অনভিপ্রেত। বিষয়টিকে ‘কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। মিশ্র প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান শিক্ষকরাও। তাদের বক্তব্য, বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ বিষয়ে অনেক প্রশ্নই তাদের অজানা। বিষয়গুলো সুরাহা হলে ভালো হত। 

আব্দুল কাদির শামীম নামে একজন বলছেন, ‘এটা শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য। কেন এই অবিচার? দেশে কি আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই? হাই স্কুল/কলেজে কি এর প্রয়োজন নেই? প্রাইমারী শিক্ষকরা কি চোর? আমার মতামত হলো চালু হলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হোক। শুধু প্রাইমারীতে চালু করলে শিক্ষকদের ব্যক্তিত্বের উপর আঘাত আসবে।’

সাবিনা শাফির বক্তব্য, ‘বাজে ব্যবস্থা। শিক্ষকদের চোর বানিয়ে কোন দিন শিক্ষার উন্নতি হবে না।’ মাজহারের বক্তব্য, জোর করে চাপিয়ে কল্যাণ অর্জন হয় না।

বিশদ বক্তব্য তুলে ধরেন আরেক শিক্ষক মো. কবির। তার ভাষায়, ‘বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে আজ পর্যন্ত যত সংবাদ পড়েছি; কোথাও কর্তৃপক্ষ বলেননি- তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াসে এর ব্যবহার শুরু করা হবে। সবসময়ই বলা হয়েছে, যথাসময়ে শিক্ষকদের আগমন ও প্রস্থান নিশ্চিতই এই যন্ত্র বসানোর এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য!’

অন্যান্য সকল সরকারি অফিস বাদ দিয়ে কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিতের এমন সাড়ম্বর তোড়জোড় আপাতত শিক্ষকদের প্রাপ্য উচ্চ মর্যাদা ও ভাব নিশ্চিত না করলেও পরোক্ষভাবে সমাজ ও জাতির কাছে আমাদের ফাঁকিবাজ হিসেবে পরিচয় করাতে বাকি রাখেনি!

তবুও বলি, জয়তু বায়োমেট্রিক হাজিরা! ঘরের চাল ফুটো আর বেড়া নড়বড়ে হলে কী হবে? কাঠের দরজায় অত্যাধুনিক তালা তো লাগানো হলো!’

অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলছেন, শিক্ষকদের জবাবদিহির মধ্যে এনে বিদ্যালয়ে শতভাগ পাঠদান নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা এটি দেখভাল করবেন। সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে ইতিবাচক জায়গায় পৌঁছাতেই এই সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, অনেক উপজেলায় এরই মধ্যে ডিভাইসটি কেনা হয়েছে, অনেক উপজেলায় কেনা হচ্ছে। এটি বসানোর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে যে কবে কোন তারিখে কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। কোন শিক্ষক বিলম্বে বিদ্যালয়ে হাজির হন, সেটিও জানা যাবে। 

প্রসঙ্গত, সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন তিন লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। তাদের প্রত্যেককে এই ডিজিটাল হাজিরার আওতায় আনা হচ্ছে।