দ্বন্দ্ব মিটিয়ে চলতি মাসেই ‘৩৫ চাই’ কর্মসূচি

টানা কয়েক বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে এখন পর্যন্ত শুধু হতাশই হতে হয়েছে তাদের। জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে চলতি মাসেই নতুন কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা।

ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালীকরণের কাজ শুরু করেছে তারা। এ প্রক্রিয়ায় সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ নেতৃবৃন্দ এবং অপর প্ল্যাটফর্মের সংগঠক ফেরদৌস জিন্নাহ লেলিন, ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ’র আরেক প্ল্যাটফর্ম এর নেতা সঞ্জয় দাসসহ সবার।

জানা গেছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখলেও এখনো চলছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে গ্রেফতারের ঘটনাও। এরইমধ্যে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিলো।

তবে সেই দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৫ চাই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সব গ্রুপ মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভে নামার পরিকল্পনা করছেন তারা। বাংলাদেশ সাধারন ছাত্র পরিষদ (বাসাছাপ)-এর ব্যানারে আগামী ২১ ও ২২ জুন শাহবাগে বৃহৎ আকারে কর্মসূচি পালন করা হতে পারে। সে অনুযায়ী সবার মতও চেয়েছেন বাসাছাপ’র নেতারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের (বাসাছাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা এবার আর কোনো বিচ্ছিন্ন আন্দোলন করতে চাচ্ছি না। এজন্য সবার মতামত চাওয়া হয়েছে। এবার আন্দোলন হবে সবাইকে নিয়েই।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ২১ ও ২২ জুনকে ধরে সবার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। ওইদিন কর্মসূচি পালন করা হতে পারে। তবে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না। সবার সঙ্গে কথা বলেই চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।’

চলতি মাসেই আন্দোলন কর্মসূচির ব্যাপারে নিজেদের ফেসবুক গ্রুপে সবার মত চেয়েছেন বাসাছাপ নেতারা। এতে সেলিম রেজা নিউটন নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভাল হবে। জেলা পর্যায়ে যে কমিটি আছে তাদের সাথে সমন্বয় করে এবং সব গ্রুপিং নিরসন করে একটা বৃহত্তর কর্মসূচী দেন। এখন থেকেই গণসংযোগ শুরু করুন।’

আল মাহমুদ রাজিব বলেছেন, ‘বিভিন্ন গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এদেরকে নিয়ে সমন্বয় এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বোচ্চার দাবিতে রাজপথে আসুন। অন্যথায় কোনো ডাক দেবেন না।’ এছাড়া সাখাওয়াত হোসেন সৈকত মন্তব্য করেছেন, ‘হুটহাট করে কর্মসূচি দিয়েন না। আগে সমন্বিতভাবে একটা মাস্টার প্ল্যান করে তারপরে ডেট ঘোষনা করতে হবে সবার উপস্থিতিতে এবং সম্মতিতে। এটাই ৩৫ এর শেষ কর্মসূচি হবে। এবার কিন্তু কোন ওজর-আপত্তি, তালবাহানা শুনব না।’

সূত্রের তথ্য, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থাকায় এতদিন পক্ষগুলো আলাদা কর্মসূচি ডাক দেওয়ায় বিভ্রান্ত হন সাধারণ আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা। কোন গ্রুপের কর্মসূচিতে যোগ দিলে দাবি আদায় হবে- তা নিয়েও অনেক সময় দ্বিধায় পড়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, এক গ্রুপ কর্মসূচি দিলে তাতে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, তা প্রচার পর্যন্ত করেন না অন্যগ্রুপ। ফলে অধিকাংশ কর্মসূচিতেই কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি থাকে না। মূলত এসব কারণেই নতুন করে ভাবছেন সবাই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সংসদে প্রস্তাবটি পাস না হওয়ায় লাখো চাকরিপ্রার্থী হতাশ হয়েছেন। মূলত এ কারণেই তারা একত্রিত হয়ে সারাদেশে কমিটি করতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে জেলা পর্যায়ের কমিটি শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

এর আগে ইমতিয়াজ হোসেন জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আর কোন গ্রুপ নেই। সারাদেশেও কমিটি দেওয়া হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন আন্দোলন করে আসলে কোনো লাভ নেই। সবাই মিলে ঈদের পরে কর্মসূচি পালনের চেষ্টার কথাও বলেছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী নতুন কর্মসূচি আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২৫ এপ্রিল চাকরি প্রত্যাশীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে ওঠে। তবে তা নাকচ করে দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করার পর একজন ছাত্র অন্তত সাত বছর সময় পেয়েছে। এটা অনেক সময়। তাছাড়া এর আগে চাকরির বয়স ২৫ বছর ছিল, সেখান থেকে ২৭ ও পরবর্তীতে ৩০ বছর করা হয়। সে হিসেবে এখন বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।

এ সময় তিনি প্রস্তাব উত্থাপনকারী সংসদ সদস্যকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানান এবং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু সেটি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়।

কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। মূলত প্রস্তাবটি পাস না হওয়াতেই তীব্র হতাশ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। যা নিয়ে তারা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ক্ষোভ নয়, নতুন করেও ভাবতে শুরু করেছেন। তার অংশ হিসেবে ঈদ পরবর্তী আন্দোলনে নামছেন তারা।