দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় স্যামসাং, এরপর সিম্ফনি

ভারতের বাজার চীনা স্মার্টফোনে ভরে গেলেও বাংলাদেশে তার উল্টা। দেশি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের বিক্রি তর তর করে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশে স্মার্টফোনের বাজার ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

হংকংভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লভ্যতার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি স্মার্টফোনের বাজার বাড়ছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তৈরি স্মার্টফোনের বিক্রি প্রতি ত্রৈমাসিকে আগের বছরের একই ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাজারের ৪১ শতাংশ তাদের দখলে। কাউন্টারপয়েন্টের গবেষক অভিষেক চৌধুরী স্ক্রোল ডট ইনকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি স্মার্টফোনের দাম আমদানি করা স্মার্টফোনের চেয়ে কম। এ ছাড়া স্থানীয় স্মার্টফোনের ত্রুটির পরিমাণও আগের চেয়ে কমে এসেছে।’

স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ম্যাক্সিমাসের বিক্রি জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আট গুণ বেড়েছে। ম্যাক্সিমাসের স্মার্টফোনের দাম ২ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। মূলত কম দামের কারণেই তাদের এই বাড়বাড়ন্ত।

বাংলাদেশের বাজারে শীর্ষ পাঁচ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের দুটি হচ্ছে সিম্ফনি ও ওয়ালটন। এগুলো দেশীয় ব্র্যান্ড। তুলনায় দেখা যায়, ভারতের কোনো স্থানীয় ব্র্যান্ড দেশটির শীর্ষ পাঁচ ব্র্যান্ডের তালিকায় উঠতে পারেনি।

তবে তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশের বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে না। বাংলাদেশের বাজারে কোরীয় স্মার্টফোন কোম্পানি স্যামসাংয়ের বিক্রি চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ফলে এই প্রথম তারা দেশের বাজারে শীর্ষ স্মার্টফোনের তকমা পেয়েছে। এই জায়গায় আসতে তারা আগের শীর্ষ ব্র্যান্ড সিম্ফনিকে প্রায় ৮ শতাংশ পেছনে ফেলে দিয়েছে।

কাউন্টারপয়েন্ট বলছে, ‘নতুন নতুন সেট ও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়ানোর কারণে স্যামসাংয়ের এতটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর কারণেও স্যামসাংয়ের সুবিধা হয়েছে। বিশেষ করে তাদের এই সিরিজের স্মার্টফোন সেটগুলো ওই দামের স্মার্টফোনের বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।’

অন্যদিকে ভারতের বাজারে উল্টো প্রবণতা দেখেছে কাউন্টারপয়েন্ট। একসময় মাইক্রোম্যাক্স ও লাভার মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো ভারতের ফোনের বাজার দাপিয়ে বেড়াত। কিন্তু সেখানে এখন শাওমির মতো চীনা ব্র্যান্ডের দৌরাত্ম্য। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এদের বিজ্ঞাপনের বহর দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যায়। এমনকি ভারতীয় ক্রিকেট দলের ব্যান্ডিংও করেছে চীনা ফোন কোম্পানি অপো। এদিকে বাংলাদেশের বাজারেও চীনা ব্র্যান্ডের প্রভাব বাড়ছে।

২০১৮ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকে ২০১৯ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারে হুয়াওয়ে, শাওমি, অপো ও ভিভোর মতো ব্র্যান্ডের বিক্রি ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ বাজারের এক-তৃতীয়াংশ এখন তাদের দখলে।

ভারতের মোদি সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের মতো বাংলাদেশ সরকারও স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদনে প্রণোদনা দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ফোনসেট আমদানিতে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে সংযোজনের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৮ এবং উৎপাদনে মাত্র ১৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হয় এখানে।

এর পরিণামে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফোনসেট আমদানির পরিমাণ ১৮ শতাংশ কমে যায়। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ও সংযোজনে কর হ্রাসের সুবিধা এখন প্রায় সবাই নেওয়ার চেষ্টা করছে।

চীনা ব্র্যান্ড ট্রানসন গাজীপুরে কারখানা করেছে। নরসিংদীতে স্যামসাংয়ের কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। যেসব মডেল দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর দাম ১৫ শতাংশ কমিয়েছে তারা। সিম্ফনি ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় কারখানা করেছে। মাসে পাঁচ লাখ ফোনসেট উৎপাদনের লক্ষ্য আছে তাদের।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বাংলাদেশের স্মার্টফোনের বাজারে ২২ শতাংশ হিস্যা নিয়ে এখন শীর্ষে আছে স্যামসাং। ১৬ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে সিম্ফনি। ট্রানসন ও ওয়ালটনের হিস্যা ৯ শতাংশ। তারা যৌথভাবে তৃতীয়। শাওমির হিস্যা ৭ শতাংশ। আর বাকিদের অংশীদারত্ব ৩৭ শতাংশ।