রোদ-বৃষ্টিতে দিন পার, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের অপেক্ষায় পদবঞ্চিতরা

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাদের উপর হামলার বিচার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে ১৮ ঘণ্টা পার হলো। সারাদিন রোজা রেখে প্রচণ্ড রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন তারা। তবে এখনো তাদের সাথে দেখা করতে আসেনি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাদের কেউ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ছাড়া অন্য কারো কথায় অবস্থান কর্মসূচি ত্যাগ করবে না বলে জানান ছাত্রলীগের নেতারা।

শনিবার ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হওয়ার পর থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে পদবঞ্চিত ওই নেতারা। আজ রবিবার রাত ৮ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের অধিকাংশ পদবঞ্চিত নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছেন। তাদের সাথে রয়েছেন অনুসারি কিছু কর্মীরাও। অনেকে রোজা রেখে, প্রচণ্ড রোদ-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কথার জন্য বসে আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য ও  ছাত্রলীগের গত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তানবীর হাসান সৈকত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের সাথে এখন পর্যন্ত কেউ দেখা করতে আসেনি। তবে জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আপার (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে কথা বলে জানাবেন। আমরা আপার কথা ছাড়া এখান থেকে উঠব না।’

গত কমিটির উপপ্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান সায়িফ বলেন, আমাদের তিন দফায় হামলা চালানো হয়েছে। আমরা আপার কাছে বিচার চাই। আপার কথা ছাড়া আমরা অবস্থান কর্মসূচি ত্যাগ করব না।

শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে টিএসসিতে মারধরের শিকার হন পদবঞ্চিত নারী-নেত্রী নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন শান্তা, সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আজমীর শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ ১০ জন।

বঞ্চিতদের দাবি, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নিজে ছাত্রলীগ নেত্রী বিএম লিপি আক্তারের গায়ে হাত তুলেছেন। মারধরের প্রতিকার এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে পুনগর্ঠনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন শুরু করেছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

গত ১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর থেকে অভিযোগ, আপত্তি, বিক্ষোভ জানিয়ে আসছিল পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। ওই দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে পদপ্রাপ্ত পক্ষের হাতে নারীনেত্রীরাসহ বঞ্চিতরা মারধরের শিকার হন। বিক্ষোভ-সালিশের ধারাবাহিকতায় শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ভেতরে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে কথা বলতে যান পদবঞ্চিত নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল। ওই স্থানে শোভন-রাব্বানীর অনুসারীরাও অবস্থান করছিল। সেখানে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সকলেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে গোলাম রাব্বানীর দাবি, তিনি বা অন্য কেউ মারধর করেননি। উত্তেজিত কথা হয়েছিল উভয়পক্ষের মধ্যে। তিনি এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি উভয়পক্ষের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন। এদিকে বঞ্চিতরা ভিসি চত্ত্বরে মানববন্ধনের পর টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যে অনশন শুরু করেন। সেখানে গিয়ে তাদেরকে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ করেন শোভন ও রাব্বানী।

পদবঞ্চিতদের অংশে নেতৃত্ব দেয়া তানবীর হাসান সৈকত বলেন, “আমাদের সাথে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টিএসসিতে ডেকেছিল। আমরা সেখানে গেলে তারা বের হয়ে চলে যায়। তারপর তারা পরে দলবল নিয়ে আসে। আমরা বলেছি আপনারা আমাদের সাথে কথা বলেন। দলবল কেন নিয়ে এসেছেন। কথা চলার একপর্যায়ে রাব্বানী লিপিকে বেয়াদব বলেন। তখন আমরা এর প্রতিবাদ করি। তখনই তার কর্মীরা এসে মারামারি শুরু করে। মেয়েদের গায়েও হাত তুলেছে।”

এদিকে রাত নয়টার দিকে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যাচ্ছে। সেখানে দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হবে বলে জানা যায়।  প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছেন তিলোত্তমা শিকদার, নিপু ইসলাম তন্বী, ফরিদা পারভীন, শ্রাবণী শায়লা, শাহজাদা, সাইফ বাবু, শাহেদ, ইয়াসমিন শান্তা ও রানা হামিদ প্রমুখ।