সেই ছাত্রলীগ নেত্রীকে অপহরণ চেষ্টা, থানায় জিডি

রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ বঞ্চিত হয়ে প্রতিবাদের কারণে হামলার শিকার হওয়া সেই শ্রাবণী দিশাকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। আজ দুপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় তিনি রাজধানীর শাহবাগ থানায় গতকাল রাতে একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন (জিডি নম্বর ১২০১)।

এ ব্যাপারে শ্রাবণী দিশা বলেন, বদরুন্নেছা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এস কে রিমা তাকে ফোন দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কথা বলতে চান। সন্ধ্যায় রিমা হাতিরপুলের একটি বাসায় শ্রাবণী দিশার কাছে যান। কিন্তু রিমার আচরণ দেখে তিনি বুঝতে পারেন নওফেলের কথা বলে তাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এ সময় তড়িঘড়ি করে রিমা বেরিয়ে যান। পরে তারা জানতে পারেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় শ্রাবণী দিশা শাহবাগ থানায় জিডি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রাবণী দিশা

 

সংবাদ সম্মেলনে শ্রাবণী দিশা বলেন, এখনও পর্যন্ত যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যার কারণে তিনি এখনও শঙ্কিত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন।

গত সোমবারের মধুর ক্যান্টিনে হামলার সঙ্গে এই অপহরণ চেষ্টার কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ বিতর্কিত এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বদরুন্নেছা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এস কে রিমা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল ভাই আমার আমার কাছে ফোন করে শ্রাবণী দিশার নম্বর চান। আমার কাছে নাম্বার না থাকায় অন্য এক আপুর কাছ থেকে ম্যানেজ করে দেই। পরে শ্রাবণী দিশা আমাকে ফোন দিয়ে হাতিরপুলে একটি বাসায় যেতে বলেন। আমি সেখানে যাই। তার সঙ্গে আমার স্বাভাবিক কথা বার্তা হয়। নওফেলের অবস্থানের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি জানতাম মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দেশে অবস্থান করছেন। কারণ আমার কাছে তার ফোন এসেছিল। এখন অন্য কেউ যদি ফোন দিয়ে ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে থাকে; সে বিষয়ে আমি জানি না।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জিডি করেছে। আমরা তদন্ত করছি বিষয়টি।

আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে শ্রাবণী দিশা অপহরণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনের পর তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। অপহরণ বিষয়ে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন— ‘‘গতকাল দুপুরে আমাকে এস কে রিমা আপু কল করে বললো আওয়ামি লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভাই আমার সাথে কথা বলতে চান।

এরপর নওফেল ভাই সেজে একজন আমাকে ফোন করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার খোঁজ নিতে বলেছেন বলেই উনি আমার সাথে যোগাযোগ করেন। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করানোর জন্য গণভবনে নিয়ে যেতে চান। তিনি আরও বলেন, তিনি বিকেলে গাড়িসহ একজনকে পাঠাবেন, আমি যেন তার সাথে গণভবনে যাই। এ বিষয়টি তিনি গোপন রাখতে বলেন, এরপরই আমার সন্দেহ হয় বলে আমি হাসি আপু ও শাহীন ভাইকে এই বিষয়ে অবগত করি।

এরপর ইফতারের পর রিমা আপু বাসায় আসে আমাকে নিয়ে যেতে। এদিকে বানী ইয়াসমিন হাসি আপু নওফেল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তিনি চীনে এবং তিনি আমাকে বা রিমাকে চেনেন না। এদিকে রিমা কিছু হয়ত আন্দাজ করতে পেরে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

এর কিছুক্ষন পর আমরা রিমার সাথে যোগাযোগ করলে সেই ফেইক নওফেল নামধারী লোক আমাকে নানান ধরনের হুমকি দেয়। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাতেই আমরা শাহবাগ থানায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্তিতিতে জিডি করে আসি। আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে একটি প্রেসব্রিফিংও করি।

১৩ তারিখের হামলা, এরপর গতকালের ঘটনা, রাজনীতির এসব নোংরা খেলার শেষ কোথায়? ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার প্রহসন আর কত? আমি কি ন্যায়বিচার পাবো না? এই মুহুর্তে আমি আমার জীবন নিয়ে শংকায় আছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার নিরাপত্তা চাই। কে বা কারা এই চক্রান্তের সাথে জড়িত বা এর পিছনের কি উদ্দেশ্য তা যেন খুব শীঘ্রই তদন্ত করে বের করে আনা হয় সেই দাবী জানাচ্ছি।

পড়ুন: ইসলাম ও নবীকে নিয়ে কটুক্তি, কুবি শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ

পড়ুন: টাকায় র‌্যাঙ্কিং: বক্তব্য না বুঝে নিউজ করেছে গণমাধ্যম