‘ধর শালা’ বলে জুন্নুনই হামলার নির্দেশ দেয়: সাক্ষাৎকারে মাসুদ

পরীক্ষায় নকল করতে না দেওয়ায় পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের বিসিএস ক্যাডার  শিক্ষক মো: মাসুদুর রহমানকে মারধর ও লাথি মারার ঘটনায় সর্বত্র বইছে নিন্দার ঝড়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনার মূল হোতা কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি মো. শামসুদ্দীন জুন্নুনকে রক্ষার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক মাসুদুর রহমান।

৩৬তম বিসিএসের শিক্ষক মোঃ মাসুদুর রহমান পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ওই ঘটনার বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।

ওইদিনের ঘটনার বিষয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ মে’র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমি স্বাভাবিক ডিউটি দিচ্ছিলাম। ওই দিন দুজন ক্যান্ডিডেট অনৈতিকভাবে দেখাদেখি করায় আমি খাতা নিয়ে নিয়েছিলাম। এরপর সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ১২ মে হঠাৎ করেই আমার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। আমি ডিউটি শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় কলেজের গেটে আমার উপর হামলা চালানো হয়। পাঁচ থেকে সাত জন হামলা চালায়।’

হামলার সময় কারা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট দেখেছি, ছাত্রলীগ সভাপতি জুন্নুনের নেতৃত্বেই ওই হামলা চালানো হয়। সে বলে ‘ধর শালা।’ তখন তারা কয়েকজন মিলে আমাকে কিল-ঘুষি এবং লাথি মারে। সিসিটিভি ফুটেজেই সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভিডিওটি দু‘দিন পর ১৪ মে ভাইরাল হয়। জুন্নুন সেখানে ছিল এবং তার আদেশেই সেখানে হামলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে, এখন সে দাবি করছে হামলা তার নির্দেশে হয়নি। সে ওদেরকে ফেরাতে গিয়েছিল। কিন্তু এটা মোটেও সত্য নয়। এছাড়া যারা আমার পক্ষে কথা বলেছে, তাদেরকেও নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।’

মামলায় জুন্নুনের নাম না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ রয়েছে জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে নানা ধরণের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক চাপের কারণে জুন্নুনকে মামলায় নাম দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। একপ্রকার মিউচ্যুয়াল করতে হয়েছে। তবে অন্য যে দুজন মারধর করেছিল তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুম্মনকে শাস্তি না দেওয়া হলে আমরা তা মানব না।’

তিনি বলেন, ‘এদের যদি শাস্তি না দেওয়া হয়, তাহলে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকবে না। স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের বিসিএস ৩৬ ব্যাচের সবাই এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি জুম্মনকেও গ্রেফতারের আদেশ দিয়েছেন।’

শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের এ ধরণের অসদাচরণের কারণ কি?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব ছাত্ররা আসলে নিজেরা সরাসরি এমন হামলা চালানোর সাহস পায়না। শেল্টার থাকার কারণেই তারা সাহস পায়। আমাদের হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুমের মাধ্যমে আসলে যেগুলো হয়।’

এসময় এমন অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি উল্লেখ করে বিসিএস ক্যাডার এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থা বেরিয়ে আসা দরকার। শিক্ষকদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করতে দিতে হবে।’

 আরো পড়ুন: নকল করতে না দেয়ায় বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকের পিঠে লাথি ছাত্রের!

দেখুন: শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে মারধর করার সেই ভাইরাল ভিডিও...